যাঁহার অস্তিত্বে আমাদের অস্তিত্ব, যাঁহার শক্তিতে কার্য্যকরী সমস্ত শক্তি আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত, সেই অনির্ব্বণীয় আত্মাব্রহ্ম অর্দ্ধনারীশ্বররূপে আছেন জীবে জীবে। তিনিই জনক তিনিই জননী! লীলা করিতেই তিনি স্ত্রীপুরুষভাবে ভাবিত হইয়া হইয়াছেন অনন্ত জীবমিথুনের স্রষ্ট্রা। অতএব আমরা বলিতে পারি তাঁহার সত্তায় আমরা সত্তাবান। তাঁহার প্রাণশক্তিতে আমরা প্রাণময়, ক্রিয়াশক্তিতে ক্রিয়াময় ও জ্ঞানদীপ্তিতে প্রকাশময়। তিনি আমাদের প্রেরক। অজ্ঞানান্ধ জীব আমরা ইহা জানিনা। সর্ব্বশক্তির উৎস এই মা’কে না জানিয়া আমরা মায়ের স্থলে অভিষিক্ত করিয়া লই নিজকে ; হই দাতা, কর্ত্তা ও ভোক্তা ফলে জড়দেহ লইয়া থাকি সর্ব্বক্ষণ ভোগচঞ্চল। ভোগের নেশায় দিশাহারা আমাদের এইভাবে হয় জগতে সংসরণ-মরণের পর মরণ, ভোগে ভোগে ক্ষরণ,—ক্ষরণে ক্ষরণে শিহরণ ও প্রতি শিহরণে আত্মবিস্মরণ। ফলে জন্মের পর জন্ম কতবার যে পরিগ্রহণ করিতে হয় তাহার ইয়ত্তা থাকেনা। তবুও ভোগ তবুও ভোগ, অতৃপ্ত পিপাসা থাকিয়া যায় ভোগে। অহো! কী দুর্ব্বার ভোগস্পৃহা! ভোগে ভোগে হয় পূর্ণ সম্ভোগ সংসার খেলায়। জননী ভোগদায়িনী, ভোগ প্রদান করিতেই ইনি সর্ব্বজীবে করেন আত্ম-প্রকাশ। তাই সর্ব্বজীবের অন্তরে অন্তরে জাগ্রত রহিয়াছে দারুণ ভোগ-পিপাসা। ভোগ পিপাসু জীব আসঙ্গলিপ্সায় ব্যাকুল। স্ত্রী কামনা, পুত্র কামনা, বিত্ত কামনা, কামনা তাহার শতসহস্রমুখী। ভোগের উন্মাদনায় জীব ছুটে দিকে দিকে, বিরাম নাই বিশ্রাম নাই, জীবের ভোগপথে গতি অবিচল। আত্মশক্তি মা সর্ব্বজীবের অন্তরে থাকিয়া নিত্য নিত্য চর্ব্ব্য চৌষ্য লেহ্য পেয়াদি বিবিধ ভক্ষ্য গ্রহণ করিতেছেন। ঐ যে সর্ব্বাত্মশক্তি-মায়ের ভোজনে সর্ব্বজীবের ভোজন, মুখব্যাদানে সর্ব্বজীবের মুখব্যাদান, সম্যকরূপে চিন্তা করিলে উহা কতই বিরাট! কতই ভীষণ! ইহা জানাইতেই ঋষি তদীয় শিল্পে রক্তাক্ত সৃক্কনী যুগলে ভীষণারূপে কল্পনা করিয়াছেন মা’কে। মহামহিমমণ্ডিত তামসীর উহাই সর্ব্বগ্রাসী ছবি! ঐ যে সৃক্কনী যুগলে ভীষণা মায়ের লোল রসনা, ইহাই দুষ্পূরণীয়া ভোগবাসনা। সুতরাং ভোগপ্রবৃত্তি সহজে বা সহসা নিবৃত্ত হয়না। জীবের ভোগপ্রবৃত্তির নিবৃত্তি না হইলে সংসার উচ্ছেদ হওয়াও হয় অসম্ভব। তবে কি ইহার উপায় নাই? উপায় নির্দ্দেশ করিয়াছেন ঋষি।
“জিতং সর্ব্বং জিতে রসে”।
রসনা বিজয়ে বাসনা বিজয়, বাসনা বিজয়ে জন্মমৃত্যুময় সংসার চিরতরে ক্ষয় প্রাপ্ত হইয়া যায়। সংসার উচ্ছেদ করিবার হেতু একমাত্র স্বীয় জিহ্বাকে দৃঢ়রূপে সংযত রাখা। দুর্ব্বার ভোগ প্রবৃত্তির নিয়ামিকা মায়ের লোলরসনা ঐ যে সুদৃঢ় দন্তচাপে আবদ্ধ। সুদৃঢ় চাপে বদ্ধ রসনা মোক্ষমার্গে উপনীত করে জীবকে। চিত্র সহায়ে ইহা শিক্ষা দিয়াছেন ঋষি। বস্তুতঃ যাহাদের রসনা অসংযত, অতি ভাষণে ও অতি ভোজনে তাহাদেরই হয় দুরাগ্রহ। অতি ভাষণে বাক্যের অপচয়-তাহাতে ঘটে চলচ্চিত্ততা, ফলে পরনিন্দা ও পরচর্চ্চা করিবার অভ্যাস বাড়িয়া উঠে দ্রুত। আলোচিত অবগুণে গুণান্বিত জীবের অনিবার্য্য গতি হয় নরকে। অন্যদিকে অতি ভোজনের কুফলও ফলিয়া থাকে সত্তর। ইহাতে চিত্ত হয় লোভাতুর। অত্যাহারে হয় রসবৃদ্ধি, রসে কাম, কামে রাগ, রাগে বুদ্ধিভ্রংশ হয় সুনিশ্চিত।
কাম, ক্রোধ ও লোভ এই তিনটি নরকের দ্বার। কিন্তু বিচার করিলে দেখা যাইবে উহাদের মূলে রহিয়াছে আমাদের মহাশত্রু জিহ্বা। জিহ্বা সকল ইন্দ্রিয়ের গতিদাতা। জিহ্বাবেগ সম্বরণ করা যায় না। জিহ্বা দুর্দ্দমণীয়, গুরু লঘু বিচার থাকেনা বলিতে। ঐ যে অসংগত ভাষণ, ইহা মানীজনের উপর বজ্রাঘাতের ন্যায় কার্য্য করে। পক্ষান্তরে কটুবাক্যপ্রয়োগকারীকেও অন্যের নিকট লঘু হইতে হয়। কর্কশভাষী সজ্জন সমাজে চিরদিনই অনাদরের পাত্র। জীবনের বাস্তবক্ষেত্রে আমরা এই সমস্ত সত্য উপলব্ধি করিতে পারি। সুদৃঢ় দন্তচাপে আবদ্ধ রসনা দর্শনে আমরা স্মরণ করিতে পারি ঋষি গাথা—
“স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখিবে।”
কি চমৎকার পরিকল্পনা! চিত্র সহায়ে শিক্ষা দিয়াছেন ঋষি কত সহজে।
অতঃপর আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কর্ণদুলরূপে দোদুল্যমান ঐ শব যুগল। শব-যুগলে কি ভাব নিহিত! দর্শনেই জাগে জিজ্ঞাসা, ইহারা কি?
দিকে দিকে রহিয়াছে অনন্তজীব; কেহ ভোগবিলাসী কেহ মোক্ষাভিলাষী। ভোগে ভোগে ক্ষরিত, ব্যয়িত ও রূপায়িত হইয়া যায় বলিয়া ভোগী ক্ষরপুরুষ। বিবিধভোগ করিতে গিয়া ভোগী পায় মরণের পর মরণ, মরণে নব জন্ম, নিত্যনূতন ভোগদেহ। স্থূল জগতে মহাকাশের তলে ভোগীর এইভাবে হয় গতাগতি। আর সূক্ষ্ম জগতে চিত্তাকাশে জীব সূক্ষ্মাভিমানী। ভোগে ভোগে ইহাদের ক্ষরণ নাই বলিয়া ইহারা অক্ষর পুরুষ। কেননা ইহারা যোগাভিলাষী মুমুক্ষু। মুমুক্ষু আপনার অপরিণামী অব্যয় অক্ষয় সুসূক্ষ্ম ব্রহ্মরূপ ভাবনায় মগ্ন হইয়া প্রাপ্ত হয় সাধনসুলভ আলোক, ঐ আলোকে দিব্যদেহ এবং দিব্যদেহ লইয়া আনন্দে যাপন করেন ভূতলে আনন্দপূর্ণ নিরাময় দিব্যজীবন। উভয় জগতে উভয় আকাশের তলে উক্ত ক্ষর ও অক্ষর পুরুষ স্বকীয় কর্ম্মগুণে নিত্য দীপ্যমান। ইঁহারাই শবযুগল। ঋষিশিল্পে এই শবযুগল মায়ের কর্ণদুল।
জগৎ দ্বিবিধ-স্থূল ও সূক্ষ্ম। উভয় জগৎ রচিত হইয়াছে আকাশে। আকাশ শব্দ, গুণ, সমস্ত নাম ও রূপের নির্ব্বাহক। স্থূল শব্দ স্থূলজগতে হয় মহাকাশে এবং সূক্ষ্ম শব্দ সূক্ষ্মজগতে হয় অন্তরাকাশে। কর্ণ সর্ব্ব শব্দের এক আয়তন। শ্রবণশক্তি স্থূল ও সূক্ষ্ম ভেদে উক্ত দ্বিবিধ শক্তিরই অনুগ্রাহক। শ্রবণশক্তির দেবতা হইতেছেন দিক্। অন্তর ও বহিরাকাশ লইয়া অন্তর ও বর্হিমুখী এই দিক্ দুইটি সৃষ্টিরূপিণী মায়ের শব্দায়তন কর্ণযুগলরূপে পরিকল্পিত। এই উভয়দিকে অবস্থিত ক্ষর ও অক্ষর পুরুষ ইঁহারা মায়ের কর্ণযুগলে শবযুগল-অবতংশরূপে কর্ণশোভা। যদিও ইঁহাদেরে স্বাধীওব্যবহারসম্পন্ন বলিয়া মনে হয়, তত্ত্বতঃ ইঁহারা স্বাধীন নহেন। ইঁহারা পরাধীন, ঋষিদৃষ্টিতে শব-নিষ্ক্রিয় জড় মাত্র। মা সর্ব্বাত্মশক্তি সর্ব্বজীবের জীবনরূপিনী। বিশ্ব-জননীর প্রাণশক্তিতে জীব প্রাণময়, কর্ম্মশক্তিতে কর্ম্মময় এবং জ্ঞান শক্তিতে জ্ঞানময়।
শ্রীমৎ অদ্বৈতানন্দ পুরীর ‘শ্রীশ্রী দশমহাবিদ্যা’
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
পুণঃপ্রচারে বিনীত -
প্রণয় সেন
“জিতং সর্ব্বং জিতে রসে”।
কাম, ক্রোধ ও লোভ এই তিনটি নরকের দ্বার। কিন্তু বিচার করিলে দেখা যাইবে উহাদের মূলে রহিয়াছে আমাদের মহাশত্রু জিহ্বা। জিহ্বা সকল ইন্দ্রিয়ের গতিদাতা। জিহ্বাবেগ সম্বরণ করা যায় না। জিহ্বা দুর্দ্দমণীয়, গুরু লঘু বিচার থাকেনা বলিতে। ঐ যে অসংগত ভাষণ, ইহা মানীজনের উপর বজ্রাঘাতের ন্যায় কার্য্য করে। পক্ষান্তরে কটুবাক্যপ্রয়োগকারীকেও অন্যের নিকট লঘু হইতে হয়। কর্কশভাষী সজ্জন সমাজে চিরদিনই অনাদরের পাত্র। জীবনের বাস্তবক্ষেত্রে আমরা এই সমস্ত সত্য উপলব্ধি করিতে পারি। সুদৃঢ় দন্তচাপে আবদ্ধ রসনা দর্শনে আমরা স্মরণ করিতে পারি ঋষি গাথা—
“স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখিবে।”
কি চমৎকার পরিকল্পনা! চিত্র সহায়ে শিক্ষা দিয়াছেন ঋষি কত সহজে।
অতঃপর আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কর্ণদুলরূপে দোদুল্যমান ঐ শব যুগল। শব-যুগলে কি ভাব নিহিত! দর্শনেই জাগে জিজ্ঞাসা, ইহারা কি?
দিকে দিকে রহিয়াছে অনন্তজীব; কেহ ভোগবিলাসী কেহ মোক্ষাভিলাষী। ভোগে ভোগে ক্ষরিত, ব্যয়িত ও রূপায়িত হইয়া যায় বলিয়া ভোগী ক্ষরপুরুষ। বিবিধভোগ করিতে গিয়া ভোগী পায় মরণের পর মরণ, মরণে নব জন্ম, নিত্যনূতন ভোগদেহ। স্থূল জগতে মহাকাশের তলে ভোগীর এইভাবে হয় গতাগতি। আর সূক্ষ্ম জগতে চিত্তাকাশে জীব সূক্ষ্মাভিমানী। ভোগে ভোগে ইহাদের ক্ষরণ নাই বলিয়া ইহারা অক্ষর পুরুষ। কেননা ইহারা যোগাভিলাষী মুমুক্ষু। মুমুক্ষু আপনার অপরিণামী অব্যয় অক্ষয় সুসূক্ষ্ম ব্রহ্মরূপ ভাবনায় মগ্ন হইয়া প্রাপ্ত হয় সাধনসুলভ আলোক, ঐ আলোকে দিব্যদেহ এবং দিব্যদেহ লইয়া আনন্দে যাপন করেন ভূতলে আনন্দপূর্ণ নিরাময় দিব্যজীবন। উভয় জগতে উভয় আকাশের তলে উক্ত ক্ষর ও অক্ষর পুরুষ স্বকীয় কর্ম্মগুণে নিত্য দীপ্যমান। ইঁহারাই শবযুগল। ঋষিশিল্পে এই শবযুগল মায়ের কর্ণদুল।
জগৎ দ্বিবিধ-স্থূল ও সূক্ষ্ম। উভয় জগৎ রচিত হইয়াছে আকাশে। আকাশ শব্দ, গুণ, সমস্ত নাম ও রূপের নির্ব্বাহক। স্থূল শব্দ স্থূলজগতে হয় মহাকাশে এবং সূক্ষ্ম শব্দ সূক্ষ্মজগতে হয় অন্তরাকাশে। কর্ণ সর্ব্ব শব্দের এক আয়তন। শ্রবণশক্তি স্থূল ও সূক্ষ্ম ভেদে উক্ত দ্বিবিধ শক্তিরই অনুগ্রাহক। শ্রবণশক্তির দেবতা হইতেছেন দিক্। অন্তর ও বহিরাকাশ লইয়া অন্তর ও বর্হিমুখী এই দিক্ দুইটি সৃষ্টিরূপিণী মায়ের শব্দায়তন কর্ণযুগলরূপে পরিকল্পিত। এই উভয়দিকে অবস্থিত ক্ষর ও অক্ষর পুরুষ ইঁহারা মায়ের কর্ণযুগলে শবযুগল-অবতংশরূপে কর্ণশোভা। যদিও ইঁহাদেরে স্বাধীওব্যবহারসম্পন্ন বলিয়া মনে হয়, তত্ত্বতঃ ইঁহারা স্বাধীন নহেন। ইঁহারা পরাধীন, ঋষিদৃষ্টিতে শব-নিষ্ক্রিয় জড় মাত্র। মা সর্ব্বাত্মশক্তি সর্ব্বজীবের জীবনরূপিনী। বিশ্ব-জননীর প্রাণশক্তিতে জীব প্রাণময়, কর্ম্মশক্তিতে কর্ম্মময় এবং জ্ঞান শক্তিতে জ্ঞানময়।
শ্রীমৎ অদ্বৈতানন্দ পুরীর ‘শ্রীশ্রী দশমহাবিদ্যা’
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
পুণঃপ্রচারে বিনীত -
প্রণয় সেন
0 comments :
Post a Comment