শ্রীরামকৃষ্ণার্পনমস্তু

মানুষমাত্রেই একটা শান্তির আশ্রয় খোঁজে।উনিশ শতকে কিংবা তার আগেও ভারতের নারীরা সেই আশ্রয় খুঁজেছিল ধর্মের কাছে, ঠাকুরঘরে।দু-চারজন সংসারবন্ধন কেটে বেরিয়েছিলেন মুক্তির সন্ধানে। কিন্তু বেশীরভাগ নারী দাম্পত্যজীবনে কোনওরকম সম্মান না পেলেও ভোগের মোহিনী মায়ায় নিজেদের আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন।


 তাই সকলের জন্য শান্তির সন্ধান দিলেন শ্রীমা, তার সঙ্গে যুগোপযোগী এগিয়ে যাওয়ার পথও দেখালেন। তাই ঠাকুর ও শ্রী শ্রীমায়ের বিবাহের আদর্শটি এত মূল্যবান। তাঁরা নতুন করে শেখালেন ভারতীয় আদর্শের পুরানো কথা, বিবাহ শুধু ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির জন্য নয়,শুধু সন্তানের জন্ম দেওয়া নারীজীবনের শেষ কথা নয়।
কিন্তু সাধারণ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া বড়ো শক্ত।শুধু উপদেশে কাজ হয় না। তাই শ্রীমা শুধু মুখে উপদেশ দিলেন না, সেই উপদেশগুলি নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করলেন। তাঁর জীবনে সেটিই ছিল সাধনা।
 ঠাকুরও সাধনা করেছিলেন মানুষের মঙ্গলের জন্য। কিন্তু তিনি পেয়েছিলেন একটি সুস্থ পরিবেশ,সাধনার উপযুক্ত স্থান আর বাছা বাছা কয়েকটি সন্তান। শ্রীমা তা পাননি। তাঁর সাধনক্ষেত্র হল কামনা,বাসনা,আসক্তিপূর্ণ পঙ্কিল সংসার। তাঁকে সংসারে থেকেই শেখাতে হল, সংসারে কোনও শান্তি নেই।
এক সন্তানহীনা বিধবা একটি শিশুকে মানুষ করতে চাইছেন,বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন পেতে চাইছেন।মা তাঁকে বললেন, " অমন কাজও কোরো না।যার উপর যেমন কর্তব্য করে যাবে, কিন্তু ভালো এক ভগবানকে ছাড়া কাউকে বেসো না। ভালোবাসলে অনেক দুঃখ পেতে হয়।" এর পরেই মা নিজের জীবনের উদাহরণ দিলেন,"দেখো না, আমি রাধুকে নিয়ে কত মায়ায় ভুগছি।" মহামায়া নিজের মায়ার কথা শোনাচ্ছেন অপরকে। নিজের দৃষ্টান্ত দিয়ে পরকে বোঝাচ্ছেন, ভগবান ছাড়া কেউ আপন নন। তিনি অবশ্য প্রকৃত ভালোবাসাকে ছোটো করেননি,এমনকি,তা জাগতিক  এবং মানবিক হলেও। কিন্তু আসক্তির প্রতি তাঁর তীব্র বিরক্তি।


এক বিধবা নারীকে মা সংসারে থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন, " সংসার কি তিনি ছাড়া?তিনি সবখানেই আছেন। বিশেষ, মেয়েমানুষ কোথায় যাবে মা? তিনি যেখানে যেভাবে রাখেন সেখানেই সন্তুষ্ট থেকো।" এই সংসারে থাকার উপদেশের মধ্যে কোথাও অবলম্বন হিসেবে সংসারকে আঁকড়ে ধরে আপন করে নেওয়ার ব্যাপার নেই।
ঠাকুরের সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা নবযুগের মানুষের প্রাণে একটি স্থান করে নিয়েছিল। ঈশ্বরলাভই যখন শেষ কথা সেখানে ভেদবুূ্দ্ধির বালাই নিয়ে সময় নষ্ট করা কেন? কিন্তু সহজে কি একথা সকলে স্বীকার করতে পারে?  একমাত্র মা সেই কাজটি সমাজে সহজ করে দিলেন বিদেশীনি নিবেদিতা ও তাঁর সঙ্গীনীদের নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে।অন্য মহিলারা দেখলেন, নিষ্ঠাবতী বিধবা হয়েও তিনি বিনা দ্বিধায় বিদেশীনিদের সঙ্গে আহার করছেন। এই অসম্ভব ঘটনা বিপ্লব ঘটালো অন্যদের মনে।
জয়রামবাটির মতো গ্রামে বসে অনায়াসে শরৎকে ও আমজাদকে এক বললেন, মুসলমান ডাকাতকে খাবার পরিবেশন করলেন,তার উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করলেন।
নবজাগ্রত স্বাধীন চিন্তাশক্তিকে মা গুরুত্ব দিতেন,সেই সঙ্গে চাইতেন হৃদয়ের প্রসারতা। মা সর্বদা চেয়েছেন প্রতিটি মানুষ,নারী ও পুরুষ প্রত্যেকের সামনে খুলে যাক আত্মবিকাশের পথ।এই আত্মবিকাশ সম্ভব একমাত্র আত্মসংস্কারের মাধ্যমে, যার সাধনক্ষেত্র হল এই সংসার। মা তাই নিজের জীবন দিয়ে আমাদের শিখিয়ে দিলেন অনাসক্ত হয়ে সংসারে থেকেই আমরা ঈশ্বরলাভ কি করে করতে পারি।
মায়ের বাণী, মায়ের জীবন আর মায়ের আশীর্বাদকে আমাদের  জীবনে পাথেয় করে এগিয়ে চলি মায়েরই শ্রী চরণের সন্ধানে।
 জয় মা! জয় মা! জয় মা!
    ।। শ্রীরামকৃষ্ণার্পনমস্তু।।


আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নূতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN

ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নূতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
পুণঃপ্রচারে বিনীত -
     প্রণয় সেন
Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment