'যুগ বদলে গেছে। এখন আর মা সারদাকে দিয়ে হবে না। আমরা, আজকের জেনারেশন। অনেক এগিয়ে গেছি।' ---- হাসিমুখে বলল দীপা। দীপা বসু। ম্যানেজমেন্ট ছাত্রী। 'চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা ভয় পাই না। আমরা সমাজের বাধা-নিষেধ থেকে মুক্ত। নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ি আমরা।' বললাম, আচ্ছা মনে করো তুমি কোনও বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছ। সন্ধে হয়ে এসেছে। হঠাৎ লোডশেডিং। চারিদিক অন্ধকার। একটা গলি পেরিয়ে তোমাকে যেতে হবে সামনের রাস্তায়। গলিটা খারাপ। অন্ধকারে তো একেবারেই নিরাপদ নয়, বিশেষত মেয়েদের পক্ষে। এই অবস্থায় তুমি কী করবে?
'কিছুক্ষণ অপেক্ষা করব লাইটের জন্য। অথবা ওই গলিটাকে এড়িয়ে অন্য পথে যাব।'
এবার আমার পালা ---- জানলে দীপা, মা সারদাকেও এমন পরিস্থিতিতে একবার পড়তে হয়েছিল। তেলেভেলোর মাঠ। ডাকাতের আড্ডা। মা একাই চলেছেন। চারিদিক অন্ধকার। তিনি কিন্তু থেমে যাননি। হঠাৎ এক ডাকাত ছুটে এলো তাঁর কাছে। প্রাণ সংশয়। ভয় না পেয়ে মা তাকে বাবা বলে সম্বোধন করলেন। আর ডাকাতের স্ত্রীকে বললেন, মা, আমি তোমার মেয়ে সারদা।
কী বিপদেই পড়েছিলাম যদি তুমি আর বাবা না
আসতে। মুগ্ধ হয়ে ডাকাত দম্পতি মাকে পৌঁছে দিয়েছিল নিরাপদ জায়গায়। দীপা, মা সেদিন ভয় পাননি, বরং অসাধারণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন বিপদের মুখে। এবার তুমিই বল, মায়ের এই সাহস, এই বুদ্ধি কি তোমাদের জীবনেও দরকার নয়? ১৬৬ বছর পরে মা কি আজও আধুনিক নন? লোডশেডিংয়ে বিপজ্জনক জায়গায় যেতে তোমার মতো নবীন প্রজন্মের মেয়েও যেখানে ভয় পায়, মা সেখানে একাই এগিয়ে গিয়েছিলেন।
দীপা চুপ করে আছে দেখে বলতে লাগলাম, মায়ের জীবন থেকে আরেকটা কাহিনী শোনো তিনি তখন কলকাতায়। অনেকেই আসত তাঁর কাছে ---- প্রণাম করতে, শান্তি পেতে, দীক্ষা নিতে। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-নিরক্ষর।
আসতেন বেশ্যাপল্লির কয়েকজন মহিলাও।
মা তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন, সান্ত্বনা দিতেন, প্রসাদ খাওয়াতেন। এ নিয়ে গুঞ্জন উঠল, ভদ্র সমাজের কয়েকজন অসন্তুষ্ট ---- মা কেন এদের আসতে দেন? এমন চরিত্রের মেয়েদের দূরে সরিয়ে রাখেন না কেন? কেউ কেউ তো এমনও বললেন যে, এই মেয়েরা আসতে থাকলে তারা আর মায়ের কাছে থাকবেন না। শেষ পর্যন্ত মায়ের কানে কথা উঠল। শুনে তিনি বলেছিলেন,
ওরা যদি যেতে চায় তো যাক, কিন্তু এই মেয়েরা আমার কাছে আসবে। ব্রাহ্ম নীতিবাদের যুগে, ভিক্টোরীয় শুচিবাইয়ের সময়ে মায়ের এই বিদ্রোহ, সমাজ-উন্নাসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আজও অকল্পনীয়।
প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা দীপা, তুমি পারবে এটা? আজ যদি কয়েকজন কলগার্ল তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়, তুমি স্বীকার করবে এমন বন্ধুত্ব? বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চা খাওয়াতে পারবে তাদের?
দীপা এবারও চুপ। গভীরভাবে চিন্তামগ্ন। জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে বল, কার মন বেশি সংস্কারমুক্ত? মা সারদা'র না তোমার? কে বেশি মানবতাবাদী?
এবার মুখ খোলে দীপা, 'মানছি আপনার কথা, কিন্তু আজ এমন সব নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে যার সমাধান নতুনভাবে করতে হবে, পুরনো চিন্তায় হবে না। যেমন নারী-নির্যাতন। এখানে খারাপ লোকেদের প্রতি দয়া দেখালে হবে না, পালটা মার দিতে হবে।'
কিন্তু তোমরা পাল্টা মার দিচ্ছ কী? এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। তোমরা এ জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাচ্ছ, সরকারকে দায়ী করছ, মহিলা আয়োগে চিঠি দিচ্ছ, কঠোর আইন তৈরি করার দাবি জানাচ্ছ। আর মা সারদা কী করেছিলেন? একদিন পাগল হরিশ তাঁকে মারার জন্য পেছন পেছন আসছে। কাছাকাছি কেউ নেই। মা তাড়াতাড়ি চলে যাবার চেষ্টা করলেন। যখন এতে কাজ হল না, পাল্টা মার দিতে লাগলেন হরিশকে। চড় মারতে মারতে তাকে মাটিতে ফেলে দিলেন। চড়-চাপটা চলতেই থাকল। মায়ের দুই হাত লাল হয়ে গেল মারতে মারতে।
এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি কী দেখালেন?
শুধু অভিযোগ করে কি কান্নাকাটি করে লাভ নেই, মেয়েরা আত্মরক্ষা করতে শিখুক। ভয় পেয়ে পালিয়ে না গিয়ে পাল্টা মার দিক দোষীকে। কিন্তু দীপা, আত্মরক্ষা করতে কি তুমি শিখেছ? শিখছ?
নাকি হেল্প-হেল্প বলে চিৎকার করবে?
এই অবস্থায় মা কারওর সাহায্য না চেয়ে নিজেই
সমাধান করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
নিজের দায়িত্ব তিনি নিজে নিয়েছিলেন।
এবার বল কে বেশি আধুনিক --- তুমি না মা সারদা?
পার্থ রায় কাজ করেন সিমেন্ট কোম্পানিতে। মা সারদার ভক্ত। তার সমস্যা একটু অন্য ধরনের। তিনি মায়ের উপদেশ অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়তে চান, চলতে চান। কিন্তু শ্রীশ্রীমা'র অসংখ্য উপদেশের মধ্যে কোনটিকে অনুসরণ করবেন, কোনটি করলে তার সবচেয়ে ভালো হবে সেটা বুঝতে পারছেন না।
মায়ের আসল পুজো তো তাঁর জীবনব্যাপী সাধনার ধারায় নিজেকে উন্নত করা।
পার্থবাবুর এটাই সমস্যা। কোন উপদেশকে তিনি বাছবেন?
বললাম, প্রথমে নিজের কোন বিশেষ সমস্যাকে বাছুন। তারপর চিন্তা করুন, ওই পরিস্থিতিতে মা কী করতেন। বা কী করেছিলেন।
পার্থবাবু হেসে বললেন, 'সমস্যা তো অসংখ্য। অফিসে সময়মতো কাজ শেষ করা, বাড়িতে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, বাজারের মূল্যবৃদ্ধি, গ্রাহকদের অভিযোগ, শয্যাশায়ী বৃদ্ধা মা।'
এইগুলি ঘটনা। সমস্যা হল মনের অস্থিরতা। এটাকে কন্ট্রোল করতে পারলেই সমাধান। মায়ের জীবনটা দেখুন। তিনি তো সারাজীবন এটাই দেখে গেলেন। পাগলি মামি, অবুঝ ভক্ত, স্বার্থপর আত্মীয়, লোকাচারের বাঁধন, নহবতের ছোট্ট ঘর, স্বামীর দেহত্যাগের পর দারিদ্র্য...।
আবার এরই পাশে নরেন-রাখাল-যোগীনের মতো সিদ্ধপুরুষ, অসংখ্য দেশী-বিদেশী ভক্ত, অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান...।
মায়ের জীবনীতে দেখা যায় যে তিনি এক মহান আদর্শকে নিয়ে চলছিলেন। আর সেটা ছিল 'জগতের প্রতি মাতৃভাব'। এই আদর্শের উপর দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দুঃখময় পরিস্থিতিতে আমরা ভেঙে পড়ি কারণ এখন আদর্শের অভাব। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবীরা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারতেন নিজেদের আদর্শের দিকে তাকিয়ে।
আপনার আদর্শ কী?
'ঠাকুর-মা-স্বামীজীর আদর্শে নিজের মধ্যে রূপান্তর আনা'----- পার্থবাবুর উত্তর।
এই সুযোগই তাঁরা দিচ্ছেন আপনাকে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনাকে ফেলেছেন তাঁরা। আপনাকে সুযোগ দিচ্ছেন মনকে শান্ত করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য। যখনই কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়বেন, মনে করুন যে শ্রীশ্রীমায়েরই তৈরি এই পরিস্থিতি। অফিসে কাজের চাপ কি বাসে ভিড়।
মায়ের এই পরীক্ষায় তাঁর সন্তান। অর্থাৎ আপনি,
মন শান্ত রেখে মোকাবিলা করতে পারেন কি না, এটাই যেন মা দেখতে চান। এই মনোভাব নিয়ে পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। করে দেখুন। দেখবেন যে আপনার মানসিক অবস্থাই বদলে গেছে ----- আনন্দের সঙ্গে শান্ত মনে যে কোনও পরিস্থিতিকে গ্রহণ করতে পারছেন।
শ্রীশ্রীমা বলেছিলেন, "জীবনের সকল সময় সকল অবস্থায় মনে রেখো ---- আমার একজন 'মা' আছেন।"
এই মনোভাব নিয়ে পরিস্থিতি সামলানো ---- এটাও সাধনা, শক্তিপূজা, মাতৃ-আরাধনা।
রোজ কিছুক্ষণের জন্য অভ্যাস করুন।
আজ দুপুর (ধরুন ২টোয়), কাল সকালে (১০ টায়) পরশু সন্ধ্যা (৬টায়).... এভাবে প্রতিদিন ৩০ মিনিটের জন্য করুন। দু'সপ্তাহ পর সময়টা বাড়িয়ে ৪০ মিনিট করুন। যদি চান তবে দিনে ২ বার, ৩ বার যতবার ইচ্ছা অভ্যাস করুন। রোজই কিছুটা সময় এই সাধনায় দিন।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী সোমেশ্বরানন্দ
ভারতের সাধক ও সাধিকা
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নূতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নূতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
ভারতের সাধক ও সাধিকা
পুণঃপ্রচারে বিনীত
প্রণয় সেন
প্রণয়
'কিছুক্ষণ অপেক্ষা করব লাইটের জন্য। অথবা ওই গলিটাকে এড়িয়ে অন্য পথে যাব।'
এবার আমার পালা ---- জানলে দীপা, মা সারদাকেও এমন পরিস্থিতিতে একবার পড়তে হয়েছিল। তেলেভেলোর মাঠ। ডাকাতের আড্ডা। মা একাই চলেছেন। চারিদিক অন্ধকার। তিনি কিন্তু থেমে যাননি। হঠাৎ এক ডাকাত ছুটে এলো তাঁর কাছে। প্রাণ সংশয়। ভয় না পেয়ে মা তাকে বাবা বলে সম্বোধন করলেন। আর ডাকাতের স্ত্রীকে বললেন, মা, আমি তোমার মেয়ে সারদা।
কী বিপদেই পড়েছিলাম যদি তুমি আর বাবা না
আসতে। মুগ্ধ হয়ে ডাকাত দম্পতি মাকে পৌঁছে দিয়েছিল নিরাপদ জায়গায়। দীপা, মা সেদিন ভয় পাননি, বরং অসাধারণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন বিপদের মুখে। এবার তুমিই বল, মায়ের এই সাহস, এই বুদ্ধি কি তোমাদের জীবনেও দরকার নয়? ১৬৬ বছর পরে মা কি আজও আধুনিক নন? লোডশেডিংয়ে বিপজ্জনক জায়গায় যেতে তোমার মতো নবীন প্রজন্মের মেয়েও যেখানে ভয় পায়, মা সেখানে একাই এগিয়ে গিয়েছিলেন।
দীপা চুপ করে আছে দেখে বলতে লাগলাম, মায়ের জীবন থেকে আরেকটা কাহিনী শোনো তিনি তখন কলকাতায়। অনেকেই আসত তাঁর কাছে ---- প্রণাম করতে, শান্তি পেতে, দীক্ষা নিতে। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-নিরক্ষর।
আসতেন বেশ্যাপল্লির কয়েকজন মহিলাও।
মা তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন, সান্ত্বনা দিতেন, প্রসাদ খাওয়াতেন। এ নিয়ে গুঞ্জন উঠল, ভদ্র সমাজের কয়েকজন অসন্তুষ্ট ---- মা কেন এদের আসতে দেন? এমন চরিত্রের মেয়েদের দূরে সরিয়ে রাখেন না কেন? কেউ কেউ তো এমনও বললেন যে, এই মেয়েরা আসতে থাকলে তারা আর মায়ের কাছে থাকবেন না। শেষ পর্যন্ত মায়ের কানে কথা উঠল। শুনে তিনি বলেছিলেন,
ওরা যদি যেতে চায় তো যাক, কিন্তু এই মেয়েরা আমার কাছে আসবে। ব্রাহ্ম নীতিবাদের যুগে, ভিক্টোরীয় শুচিবাইয়ের সময়ে মায়ের এই বিদ্রোহ, সমাজ-উন্নাসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আজও অকল্পনীয়।
প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা দীপা, তুমি পারবে এটা? আজ যদি কয়েকজন কলগার্ল তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়, তুমি স্বীকার করবে এমন বন্ধুত্ব? বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চা খাওয়াতে পারবে তাদের?
দীপা এবারও চুপ। গভীরভাবে চিন্তামগ্ন। জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে বল, কার মন বেশি সংস্কারমুক্ত? মা সারদা'র না তোমার? কে বেশি মানবতাবাদী?
এবার মুখ খোলে দীপা, 'মানছি আপনার কথা, কিন্তু আজ এমন সব নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে যার সমাধান নতুনভাবে করতে হবে, পুরনো চিন্তায় হবে না। যেমন নারী-নির্যাতন। এখানে খারাপ লোকেদের প্রতি দয়া দেখালে হবে না, পালটা মার দিতে হবে।'
কিন্তু তোমরা পাল্টা মার দিচ্ছ কী? এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। তোমরা এ জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাচ্ছ, সরকারকে দায়ী করছ, মহিলা আয়োগে চিঠি দিচ্ছ, কঠোর আইন তৈরি করার দাবি জানাচ্ছ। আর মা সারদা কী করেছিলেন? একদিন পাগল হরিশ তাঁকে মারার জন্য পেছন পেছন আসছে। কাছাকাছি কেউ নেই। মা তাড়াতাড়ি চলে যাবার চেষ্টা করলেন। যখন এতে কাজ হল না, পাল্টা মার দিতে লাগলেন হরিশকে। চড় মারতে মারতে তাকে মাটিতে ফেলে দিলেন। চড়-চাপটা চলতেই থাকল। মায়ের দুই হাত লাল হয়ে গেল মারতে মারতে।
এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি কী দেখালেন?
শুধু অভিযোগ করে কি কান্নাকাটি করে লাভ নেই, মেয়েরা আত্মরক্ষা করতে শিখুক। ভয় পেয়ে পালিয়ে না গিয়ে পাল্টা মার দিক দোষীকে। কিন্তু দীপা, আত্মরক্ষা করতে কি তুমি শিখেছ? শিখছ?
নাকি হেল্প-হেল্প বলে চিৎকার করবে?
এই অবস্থায় মা কারওর সাহায্য না চেয়ে নিজেই
সমাধান করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
নিজের দায়িত্ব তিনি নিজে নিয়েছিলেন।
এবার বল কে বেশি আধুনিক --- তুমি না মা সারদা?
পার্থ রায় কাজ করেন সিমেন্ট কোম্পানিতে। মা সারদার ভক্ত। তার সমস্যা একটু অন্য ধরনের। তিনি মায়ের উপদেশ অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়তে চান, চলতে চান। কিন্তু শ্রীশ্রীমা'র অসংখ্য উপদেশের মধ্যে কোনটিকে অনুসরণ করবেন, কোনটি করলে তার সবচেয়ে ভালো হবে সেটা বুঝতে পারছেন না।
মায়ের আসল পুজো তো তাঁর জীবনব্যাপী সাধনার ধারায় নিজেকে উন্নত করা।
পার্থবাবুর এটাই সমস্যা। কোন উপদেশকে তিনি বাছবেন?
বললাম, প্রথমে নিজের কোন বিশেষ সমস্যাকে বাছুন। তারপর চিন্তা করুন, ওই পরিস্থিতিতে মা কী করতেন। বা কী করেছিলেন।
পার্থবাবু হেসে বললেন, 'সমস্যা তো অসংখ্য। অফিসে সময়মতো কাজ শেষ করা, বাড়িতে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, বাজারের মূল্যবৃদ্ধি, গ্রাহকদের অভিযোগ, শয্যাশায়ী বৃদ্ধা মা।'
এইগুলি ঘটনা। সমস্যা হল মনের অস্থিরতা। এটাকে কন্ট্রোল করতে পারলেই সমাধান। মায়ের জীবনটা দেখুন। তিনি তো সারাজীবন এটাই দেখে গেলেন। পাগলি মামি, অবুঝ ভক্ত, স্বার্থপর আত্মীয়, লোকাচারের বাঁধন, নহবতের ছোট্ট ঘর, স্বামীর দেহত্যাগের পর দারিদ্র্য...।
আবার এরই পাশে নরেন-রাখাল-যোগীনের মতো সিদ্ধপুরুষ, অসংখ্য দেশী-বিদেশী ভক্ত, অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান...।
মায়ের জীবনীতে দেখা যায় যে তিনি এক মহান আদর্শকে নিয়ে চলছিলেন। আর সেটা ছিল 'জগতের প্রতি মাতৃভাব'। এই আদর্শের উপর দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দুঃখময় পরিস্থিতিতে আমরা ভেঙে পড়ি কারণ এখন আদর্শের অভাব। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবীরা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারতেন নিজেদের আদর্শের দিকে তাকিয়ে।
আপনার আদর্শ কী?
'ঠাকুর-মা-স্বামীজীর আদর্শে নিজের মধ্যে রূপান্তর আনা'----- পার্থবাবুর উত্তর।
এই সুযোগই তাঁরা দিচ্ছেন আপনাকে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনাকে ফেলেছেন তাঁরা। আপনাকে সুযোগ দিচ্ছেন মনকে শান্ত করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য। যখনই কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়বেন, মনে করুন যে শ্রীশ্রীমায়েরই তৈরি এই পরিস্থিতি। অফিসে কাজের চাপ কি বাসে ভিড়।
মায়ের এই পরীক্ষায় তাঁর সন্তান। অর্থাৎ আপনি,
মন শান্ত রেখে মোকাবিলা করতে পারেন কি না, এটাই যেন মা দেখতে চান। এই মনোভাব নিয়ে পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। করে দেখুন। দেখবেন যে আপনার মানসিক অবস্থাই বদলে গেছে ----- আনন্দের সঙ্গে শান্ত মনে যে কোনও পরিস্থিতিকে গ্রহণ করতে পারছেন।
শ্রীশ্রীমা বলেছিলেন, "জীবনের সকল সময় সকল অবস্থায় মনে রেখো ---- আমার একজন 'মা' আছেন।"
এই মনোভাব নিয়ে পরিস্থিতি সামলানো ---- এটাও সাধনা, শক্তিপূজা, মাতৃ-আরাধনা।
রোজ কিছুক্ষণের জন্য অভ্যাস করুন।
আজ দুপুর (ধরুন ২টোয়), কাল সকালে (১০ টায়) পরশু সন্ধ্যা (৬টায়).... এভাবে প্রতিদিন ৩০ মিনিটের জন্য করুন। দু'সপ্তাহ পর সময়টা বাড়িয়ে ৪০ মিনিট করুন। যদি চান তবে দিনে ২ বার, ৩ বার যতবার ইচ্ছা অভ্যাস করুন। রোজই কিছুটা সময় এই সাধনায় দিন।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী সোমেশ্বরানন্দ
ভারতের সাধক ও সাধিকা
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নূতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নূতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
ভারতের সাধক ও সাধিকা
পুণঃপ্রচারে বিনীত
প্রণয় সেন
প্রণয়
0 comments :
Post a Comment