শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তিসূত্র

ঈশ্বর রসস্বরূপ—ভক্ত রসিক।।

ব্যাখ্যা:—

[শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কথাতেই]—

ভক্তি যোগের সমাধিকে চেতন সমাধি বলে। এতে সেবা সেবকের ‘আমি’ থাকে—রস-রসিকের ‘আমি’—আস্বাদ্য-আস্বাদকের ‘আমি’। ঈশ্বর সেব্য— ভক্ত সেবক; ঈশ্বর রসস্বরূপ—ভক্ত রসিক; ঈশ্বর আস্বাদ্য— ভক্ত আস্বাদক। চিনি হব না, চিনি খেতে ভালবাসি।


যতি-কৃত ব্যাখ্যা:—

উপনিষদে পাওয়া যায় “রসো বৈ সঃ” অর্থাৎ তিনি রসময় বা রসস্বরূপ। রস বলিতে আমরা বুঝি সাধারণ ভোগ্যবস্তু(আহারাদির বস্তু)যে সিক্ততা বহন করে। শুষ্ক বস্তু যেমন বালি, শুকনা-কাঠ, পাথর, খড় প্রভৃতি আপাতঃ দৃষ্টিতে রসহীন বলিয়া আমরা খাদ্যরূপে গ্রহণ করি না। জাগতিক রস তিক্ত, মধুর, অম্ল, কষায় প্রভৃতি নানা প্রকার হয়। এখানে যে রস শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে তাহা দ্বারা কেবল আনন্দ বুঝাইতেছে।

উপনিষদেই পাই আনন্দ হইতে চতুর্বিংশতি ভূতসমূহ বা তত্ত্বসমূহ জাত হইয়াছে। সকল শাস্ত্রই একবাক্যে বলিতেছে—ঈশ্বর সচ্চিদানন্দ-সাগর। শ্রীরামকৃষ্ণদেব ঈশ্বর রসস্বরূপ বলিয়া—আরও বলিলেন ‘ভক্ত রসিক’। সে ঈশ্বরের রস আস্বাদন করে। তিনিও এই রস শব্দের অর্থ আনন্দ বলিলেন। কোন এক সামাধ্যায়ী বক্তৃতা দিবার সময় বলিয়াছিল— ‘ঈশ্বর নীরস, তোমরা নিজের প্রেমভক্তি দিয়ে সরস করো।’ ইহা শুনিয়া শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলিলেন— “দেখ্‌ দেখিন্‌, যিনি রসস্বরূপ তাঁকে কিনা বলছে নীরস”। এতে এই বোঝা যায় যে, ঈশ্বর কি জিনিস, কখনও অনুভব করে নাই।

ঈশ্বর কল্পতরু। যে যা চাইবে, তাই পাবে।।

ব্যাখ্যা:—

[শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কথাতেই]—

কিন্তু কল্পতরুর কাছ থেকে চাইতে হয়, তবে কথা থাকে। কল্পতরুর কাছে গিয়ে প্রার্থনা করতে হয়, তবে ফল পাওয়া যায়,— তবে ফল তরুর মূলে পড়ে, তখন কুড়িয়ে লওয়া যায়। চারিফল—ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ।

তিনি অন্তরযামী। তাঁকে সরল মনে, শুদ্ধ মনে প্রার্থনা কর। তিনি সব বুঝিয়ে দিবেন। অহংকার ত্যাগ করে তাঁর শরণাগত হও; সব পাবে।

যতি-কৃত ব্যাখ্যা:—

যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা, তিনি ঐশ্বর্য, বিদ্যা, জ্ঞান, সৌন্দর্য্য, ভাব, শক্তি, বস্তু সব কিছুর অধীশ্বর। মানুষ ক্ষুদ্র(সীমিত) বুদ্ধি, শক্তি ও ভাবের অধিকারী। তাহার চাহিদা, কামনা বাসনাও সীমিত। অনন্ত সমুদ্রের জলরাশি হইতে কেহ তাহার পাত্র পূর্ণ করিয়া জল লইলে সমুদ্রের কোন ঘাটতি হয়না। সে যত ইচ্ছা তত জল লইতে পারে। তেমনই মানুষ তাহার ইচ্ছানুযায়ী যাহাই চাহিবে, ঈশ্বর তাহাকে তাহা দিলেও ঈশ্বরের কিছু কম হয় না।

শাস্ত্রে পাই, এমন একটি গাছ আছে, তাহার নিকট যাইয়া যে কোন ব্যক্তি, যে কোন প্রকার বস্তু চাহিলে [ভাল, মন্দ সকল প্রকার] সঙ্গে সঙ্গে ঐ গাছ তাহাকে সেই বস্তু দান করে। এইরূপ গাছকেই কল্পতরু বলে। যেহেতু জীব বা প্রাণী ঈশ্বরেরই সৃষ্ট, ফলে সবাই তাঁহার সন্তান। সন্তান যেমন তাহার সকল চাহিদা পিতা অথবা মাতাকে জানায়, এবং পিতা, মাতাও সন্তানের প্রার্থনা পূর্ণ করেন। ঠিক তেমনই মানুষ, এমন কি পশু পক্ষী, গাছপালা, সকল প্রাণী বা সৃষ্ট পদার্থ, যে-কেহ ভগবানের নিকট আন্তরিকভাবে যাহা চাহিবে বা প্রার্থনা করিবে, সে তাহাই পাইবে। তিনি কল্পতরুও বটে, আমাদের পিতা, মাতাও বটে। শ্রীরামকৃষ্ণদেব জগতে আসিয়াছেনই মানুষকে ভগবন্মুখী করিবার জন্য। অর্থাৎ ভগবান যে করুণার প্রতিমূর্তি, কৃপাসিন্ধু, দয়ানিধি এবং একান্ত আপনজন, ইহাই পুনঃ পুনঃ বলিতেছেন। যাহাতে আমাদের মোহমুদ্ধ মন বিষয়-আশা ত্যাগ করিয়া শ্রীভগবানের প্রতি বিশ্বাসী ও ভক্তিপরায়ণ হয়, তাহারই জন্য সরলভাবে ইহা বলিলেন।


স্বামী যতীশানন্দের সংকলিত ‘শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তিসূত্র’ 


আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN

ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,

ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,

আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।


পুণঃপ্রচারে বিনীত -

     প্রণয় সেন

Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment