এক বৈষ্ণব ভক্তের কথা শুনলাম—তিনি তোমার মূর্ত্তি ছাড়া অন্য মূর্ত্তি দর্শন করেন না। তাঁর গৃহে একখানি কালীর ছবি ছিল, তিনি সেখানি গৃহ হতে ফেলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছেন। শক্তির প্রসাদ পর্য্যন্ত গ্রহণ করেন না। আমি ভক্তিহীন—সেজন্য “আমি শ্যাম, আমি শ্যামা” বলে বুঝলে, তাঁদের ত বুঝাতে পারি না। তাঁদের কাছে সেজে ‘আমি শ্যাম’ বললেও তাঁরা তোমায় গৃহ হতে বের ক’রে দেবেন। দেখ, আমি এ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারি না।
কেন, আমি পূর্ব্বেই বলেছি—ভাবের প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুদত্ত ইষ্ট লয়ে থাকতে হয়; ইষ্টমূর্ত্তি দর্শন, ইষ্টের প্রসাদ ভোজন, পাদোদক পান করতে হয় এবং ভাব-রাজ্যে স্থান লাভ করবার জন্য দিবারাত্র ইষ্টনাম জপ করতে হয়, তাহলে ভাবময় দেহ ধারণ করে আমার সহিত অনুক্ষণ ক্রীড়া করতে পারে। আমার এ বৈষ্ণবভক্ত এখনও সাধন-ভক্তির স্তরে দাঁড়িয়ে বা’র লয়ে ঘুরছে। আমার মূর্ত্তি ভিন্ন সে যদি দর্শন না করে তাহলে তার সদাসর্ব্বদা চক্ষু মুদ্রিত করে থাকা উচিত। গৃহ-দ্বার, আত্মীয়-স্বজন, পশু-পক্ষী, স্ত্রী-পুত্র কেমন করে দেখে? সে সব ত আমি নই। তাদের কেন দূর করে দেয় না? বাইরের ঘরের কালীমূর্ত্তি দূর করবার আগে মনোমন্দিরে দিবারাত্র নামের উজ্জ্বল দীপ জ্বেলে রাখতে হয়—এসব অন্ধকার থাকে না। বেদে, উপনিষদে, রামায়ণে, মহাভারতে, পুরাণে—সর্ব্বত্রই বলেছি “এক আমি”। যে আমি রুদ্র, সেই উমা, বিষ্ণু। এক দেবতাকে আশ্রয় করে অন্য দেবতাকে যে অবজ্ঞা করে আমি তার প্রতি প্রীত হই না, তথাপি তারা তাই করে এবং দুঃখ পায়।
এ ত তারা নিজেরা করে না—তুমিই ত গুরুরূপে শিখিয়েছ!
হাঁ, আমি গুরুরূপে উপদেশ দিয়েছি যে—অন্য দেবতা বোধে প্রসাদ গ্রহণ করবে না, পূজা করবে না। ‘সবই আমার ইষ্ট’ এ বিশ্বাস স্থির রাখবে। তারা ত পারে না; বৈষ্ণব কালী-নামে ছুটে পালায়, শাক্ত—বৈষ্ণবকে ব্যঙ্গ করে। আবার—নমোহস্ত্বনন্তায় সহস্রমূর্ত্তয়ে/ সহস্রপাদাক্ষিশিরোরুবাহবে।/ সহস্রনাম্নে পুরুষায় শাশ্বতে/ সহস্রকোটিওযুগধারিণে নমঃ।।
এই বলে অথবা ‘সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে’—বলে প্রণামও করে। দেখ, এই একজনকে ধরতে না পারায় এ দুর্গতি। গুরুরূপে জপ করতে বলেছি, তা করে না; সেইজন্য এদের অন্ধকার যায় না, দাগা বুলান শেষ হয় না, আজন্ম ‘ক’ ‘খ’-ই লেখে।
আমার আজ্ঞা সবই পালন করতে হয়, নিজের ইচ্ছামত একটু-আধটু পালন করলে দুঃখ নিবৃত্তি হয় না। তোর অপরের সংবাদে প্রয়োজন কি? তুই নাম কর্, যাবৎ স্থির হতে না পারিস্ তাবৎ নাম কর্। তোর পদতল হতে পৃথিবী সরে যাক্ অথবা মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ুক, কিংবা সর্ব্বনাশ হোক্ কোনদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে অহর্নিশি নাম কর্। ইহা তুই স্থির জানিস্ তুই আমার কোলে আছিস্, আমি তোকে বুকে করে রক্ষা করছি। নাম কর্।
হে নাথ! আমি শরণাগত, নিরাশ্রয়, আমি তোমার—তোমার—তোমারি গো—হরে মুরারে মধুকৈটভারে/ গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে।/যজ্ঞেশ নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণো/ নিরাশ্রয়ং মাং জগদীশ রক্ষ।। মাভৈঃ।
আমাতে সম্ভব অসম্ভব কিছু কল্পনা করিস্ না। আমি মৃণালতন্তুতে হস্তিবন্ধন করতে পারি; গোষ্পদে পর্ব্বত নিমজ্জিত করতে পারি; আমার গতি নির্ণয় করে এমন শক্তি কারও নেই। সংসারচিন্তা অর্থচিন্তা দেহের চিন্তা, ঋণের চিন্তা ত্যাগ কর্—আমি তার ব্যবস্থা করেছি। তোর আমি আছি। ডাক্, আমায় ডাক্। তোর সব জ্বালা দূর হবে। মাভৈঃ—মাভৈঃ—মাভৈঃ।
‘শ্রী ওঙ্কারনাথ-রচনাবলী’(৩য়)
ভারতের সাধক ও সাধিকা
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
ভারতের সাধক ও সাধিকা
পুণঃপ্রচারে বিনীত
প্রণয় সেন
প্রণয়
0 comments :
Post a Comment