ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘উদ্ধব-সন্দেশ’

ব্রজের পিতা মাতার স্নেহের সংবাদ অনেকেই অল্পবিস্তর জানেন। উদ্ধবও নিশ্চয়ই অবগত আছেন। ব্রজদেবীদের কথা কিন্তু অনেকেই জানেন না, তাই একটু সবিস্তারে বলিতেছেন তাঁহাদের কথা উদ্ধবের কাছে নিজ শ্রীমুখেই। এই সুযোগে শ্রীশুকদেবেরও শুনিবার ও শোনাইবার অবকাশ হইতেছে গোপীদের কৃষ্ণানুরাগের কথা প্রাণবল্লভের নিজ শ্রীকণ্ঠ হইতেছে।


তা মন্মনস্কা মৎপ্রাণা মদর্থে ত্যক্তদৈহিকাঃ।

মামেব দয়িতং প্রেষ্ঠমাত্মানং মনসাগতাঃ।।

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতায় শ্রীঅর্জ্জুনকে কহিয়াছেন সর্ব্বগুহ্যতম মন্ত্রে—“মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্‌যাজী মাং নমস্কুরং”। সমস্ত মনটি যাঁহারা শ্রীকৃষ্ণে অর্পণ করিয়াছেন, নিজের মন যাঁহাদের আর নাই, তাঁহারা মন্মনা। ইহার দৃষ্টান্ত সংসারে খুঁজিয়া পাওয়া সুদুর্লভ—‘সুদুর্লভা ভাগবতা হি লোকে।’ গীতায় চরম পরম শ্লোকের দৃষ্টান্ত মূর্ত্ত হয় নাই। হয় নাই বলিয়াই নারদোপদেশে ব্যাসের সাধনায় ভাগবত প্রকটিত হন। গীতায় যে সব ভক্তের লক্ষণ আছে ভাগবতে তাহারই রূপায়ণ। ‘মন্মনাঃ’ ভক্ত কাঁহারা আজ নিজ শ্রীমুখেই উদ্ধবকে কহিতেছেন শ্রীহরি স্বয়ং।

কৃষ্ণের গোপীজনেরাই—মন্মনস্কা ও মৎপ্রাণা। শ্রীকৃষ্ণই তাঁহাদের প্রাণ। তাঁহাদের যাবতীয় মানস-সঙ্কল্প শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি সম্পাদনেই পর্যাপ্ত। এই হেতুই তাঁহারা তাঁহাদের সর্ব্বপ্রকার দেহ ও দৈহিক বস্তু সর্ব্বতোভাবে পরিত্যাগ করিতে সমর্থ কৃষ্ণের জন্য—‘ত্যক্তদৈহিকাঃ’। সুতরাং ব্রজদেবীগণেই গীতার সর্ব্বগুহ্যতম বার্ত্তা জীবন্ত হইয়াছে একথার সাক্ষ্য গীতার বক্তা আজ নিজেই দিলেন।

মন্মনস্কা ও মৎপ্রাণা পদদ্বয়ের আরও গভীরার্থব্যঞ্জনা আছে। যে ব্রজদেবীগণে আমার মনটি সর্ব্বদা স্থিত, তাঁহারা মন্মনস্কা আর যাঁহারা আমার প্রাণ — আমার অন্তরে যাঁহাদের প্রাণ স্থিত তাঁহারা মৎপ্রাণা। কৃষ্ণ যাঁহাদের প্রাণ, তাঁহারাও কৃষ্ণের প্রাণ হইবেন। গীতায় বলা আছে—

যো মাং পশ্যতি সর্ব্বত্র সর্ব্বং চ ময়ি পশ্যতি।

তস্যাহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি।।

আমাকে যে সর্ব্বত্র দেখে এবং আমার মধ্যেই সকল দেখে, আমি তার অদৃশ্য হই না, সেও আমার অদৃশ্য হয় না। ‘মদন্যত্তে ন জানন্তি নাহং তেভ্যো মনাদপি’। আমা ছাড়াও তাহারা জানে না, তাহাদের ছাড়াও আমি জানি না।



শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে যাহা বলিতেছেন তাহার দৃঢ় ব্যঞ্জনা এই যে, ব্রজরামাগণ আমার প্রাণ। আমি তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া যে মথুরায় আছি এই থাকাই মাত্র। কোন কার্য্যে আমার উৎসাহ বা আনন্দ পাই না। কেবল করণীয়বোধে কর্ম্মগুলি করিতেছি শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ ত্যাগের মত। মনপ্রাণ আমার পড়িয়া রহিয়াছে ব্রজেই। যদি বল এরূপ অবস্থা তোমার তাহাদের জন্য কি হেতু—তবে তাহার কারণ বলি শোন।–

“যে ত্যক্তলোকধর্ম্মাশ্চ মদর্থে তান্‌ বিভর্ম্ম্যহম্‌”

যাহারা আমার জন্য লৌকিক ভালমন্দ, ধর্ম্মাধর্ম্ম সকলি দিয়াছে বিসর্জ্জন, তাহাদিগকে আমি সর্ব্বদা ধারণ করিয়া থাকি নিজ হৃদয়ে। যে যেভাবে ভজনা করে তাহাকে সেই ভাবেই ভজি, ইহা আমার স্বভাবগত ধর্ম্ম। 


ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘উদ্ধব-সন্দেশ’ 


আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে :

https://youtu.be/4Bwc0lvjU0M

ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,

আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।


পুণঃপ্রচারে বিনীত -

     প্রণয় সেন

Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment