‘নিবেদিতার ধ্যানে শাশ্বত ভারত’

ভারতবর্ষ পরিক্রমা করে স্বামী বিবেকানন্দ অনুভব করেছিলেন পরাধীন ঘুমন্ত দেশটাকে সমস্ত দিক দিয়ে জাগাতে হবে। দেশকে সামগ্রিকভাবে জাগানোর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন তাকে চেনা, তাকে জানা, তাকে ভালবাসা। ভারতবর্ষ স্বামীজীর কাছে শুধুমাত্র ভৌগোলিক ভূখণ্ড ছিল না, ছিল বড় আপন স্নেহময়ী জননী, যিনি খাদ্য, বস্তু, শিক্ষা, সম্পদ— সব দান করে সন্তানদের লালন-পালন করেন, স্নেহের অঞ্চলে আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করেন। এই অপূর্ব মাতৃমূর্তির প্রতি তাঁর আবেগ ছিল অপরিসীম, দেশমাতৃকা ছিলেন তাঁর শৈশবের শিশু-শয্যা, যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বারাণসী। স্বামীজীর হৃদয় ছিল জন্মভূমির সেবার জন্য উদ্বেল, তার শিক্ষাহীনতা ও দারিদ্র্যমোচনে ব্যাকুল এবং নারীজাতির কল্যাণে বদ্ধপরিকর।


পাশ্চাত্যের নারীপ্রগতি বিবেকানন্দকে মুগ্ধ করেছিল। অন্যদিকে, স্বদেশের কন্যাদের তত্কালীন সামাজিক পরিস্থিতি স্মরণ করে তিনি ব্যথিত হতেন। বেদান্ত-ভিত্তিক ধর্মের ওপর আইরিশ কন্যা মার্গারেটের শ্রদ্ধা ও আস্থা তাঁকে আশান্বিত করে। স্বামীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মার্গারেটকে ভারত সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করলে স্বামী বিবেকানন্দ মার্গারেটকে ভারতবর্ষে আহ্বান করেন। ভারতীয় নারীদের কল্যাণার্থে মার্গারেট বাগবাজারের রক্ষণশীল পল্লিতে একটি ক্ষুদ্র বিদ্যালয়ের সূচনা করেন। ব্রহ্মচর্যব্রতধারিণী মার্গারেট সকলের কাছে গুরুদত্ত ‘নিবেদিতা’ নামে পরিচিত হন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিদ্যালয়ের কাজ শুরু করার আগে স্বামীজী তাঁকে ভারতবর্ষকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। তা না হলে তাঁর পক্ষে এই দেশের জন্য আত্মনিবেদন সম্ভব ছিল না। নিবেদিতা লিখেছেন: ‘‘যেমন তিনি (স্বামীজী) অতীন্দ্রিয় ঊর্ধ্বচেতনার সুবিরাট প্রকাশ—তেমনি আবার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকদের অন্যতম।... ঐতিহ্যে বিশ্বাস হারিয়েছে যখন মানুষ—তখন তিনি পুরাতনকে নমস্কার করেছেন।... তাঁর মতো পুরুষের কণ্ঠে প্রকাশিত হয় ভবিষ্যতের ‘বেদ’।’’
এ-প্রসঙ্গে স্বামীজীর অপর শিষ্যা এবং পরবর্তী কালে নিবেদিতার সহকারিণী ভগিনী ক্রিস্টিনের একখানি লেখার কথা মনে পড়ে। তিনি লিখেছেন: ‘‘আমি মনে করি, আমাদের ভারতপ্রেমের জন্ম হয়েছিল যখন আমরা স্বামীজীকে I-n-d-i-a শব্দটি তাঁর সেই অপূর্ব স্বরে উচ্চারণ করতে শুনেছিলাম। একেবারে অবিশ্বাস্য মনে হয় যখন ভাবি— পাঁচ অক্ষরের একটি ক্ষুদ্র শব্দে অত কিছু ধরিয়ে দেওয়া যায়। তাতে ছিল ভালবাসা, জ্বালাময় বাসনা, গর্ব, তীব্র আকাঙ্ক্ষা, পূজা, গভীর বিষাদ, উদ্দীপ্ত শৌর্য, ঘরে ফেরার ব্যাকুলতা—এবং পুনশ্চ ভালবাসা, ভালবাসা।’’
ক্রিস্টিন India শব্দটি স্বামীজীকে আমেরিকায় যখন উচ্চারণ করতে শুনেছিলেন, তখনই ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর ভালবাসার বীজটি উপ্ত হয়ে গিয়েছিল। নিবেদিতাও ভারতে এসেছিলেন স্বামীজীর দৃষ্টি দিয়ে ভারতকে চিনে, ভারতকে ভালবেসে। কারণ স্বামীজীর তাঁর প্রতি সতর্কবার্তা ছিল যে, তিনি ভারত-সেবার্থে ভারতে আসতে পারেন, কিন্তু পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে যা-কিছু মন্দ, যা-কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন, যা-কিছু পিছিয়ে পড়া, সেসবের পূর্ণ সমাবেশ ভারতের সামাজিক পরিবেশে থাকবে। তা সত্ত্বেও যদি সত্যিই ভারতকে ভালবেসে তিনি ভারতের সেবার জন্য আসতে তৈরি থাকেন, তা হলে ভারতও নিবেদিতাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। নিবেদিতা লিখেছেন: স্বামীজী বলতেন, ‘‘ভারতকে যদি ভালবাসতে চাও তাহলে সে যেমন আছে তাকে সেইভাবে মেনে নিয়ে ভালবাসো।’’ ভারতের সমাজ সম্পর্কে সমালোচনাহীন থাকবার অঙ্গীকার করেই মার্গারেট ভারতে পদার্পণ করেছিলেন। যে-কুসংস্কার বা অনগ্রসরতার কথা সেদিন স্বামীজী উল্লেখ করেছিলেন, তার খুব বেশি পরিবর্তন কিন্তু আজও হয়নি। মানসিক দিক দিয়ে আজও আমরা তার কাছাকাছিই আছি। স্বামী বিবেকানন্দের নিবেদিতাকে ভারতবর্ষে আনবার যে-প্রাথমিক শর্তটি ছিল—নারীজাতির শিক্ষা, তা আজকের পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো নিষ্প্রয়োজন।

প্রব্রাজিকা বেদান্তপ্রাণা সম্পাদিত ‘নিবেদিতার ধ্যানে শাশ্বত ভারত’ 



আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।

পুণঃপ্রচারে বিনীত -
     প্রণয় সেন
Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment