মানুষের কল্যাণ এবং সার্বিক উন্নতিতে কাজ করার অভীপ্সায় স্বামী বিবেকানন্দ হাজার বার জন্মগ্রহণে রাজি। এর জন্য নরকে যেতেও তিনি প্রস্তুত। শত শত বুদ্ধের কারুণ্য-নিষিক্ত হৃদয়বান মানুষই ছিল তাঁর কাঙ্ক্ষিত। অজ্ঞ, কাতর, পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজে, তাদের স্বমহিমায় উদ্ভাসিত করার লক্ষ্যে তিনি ছিলেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই তাঁর ধর্ম-দর্শন-অধ্যাত্মচিন্তার সবটাই জুড়ে আছে মানুষের কথা। তাঁর কাজ, চিঠি, প্রবন্ধ, বক্তৃতা নিজের হাতে গড়ে তোলা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কেন্দ্রেও সেই মানুষের কল্যাণ ও উত্থানের প্রসঙ্গ এবং প্রাধান্য। গুরুভাই তূরীয়ানন্দকে তিনি বলেন, ‘জীবে জীবে, বিশেষত মানুষের মধ্যে তাঁর অবস্থান’। ‘তাঁর’ অর্থাৎ মানুষ যাঁকে বলে দেবতা। যোগীর ধারণায় পরমপুরুষ—ভগবান—ঈশ্বর! বৈদান্তিক অনুভবে তিনিই পরমব্রহ্ম। শ্রীরামকৃষ্ণের কথায় ‘পাকা আমি’।
বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন যে, দেবতা আকাশ থেকে নামেন না বা মাটি ফুঁড়েও ওঠেন না। বিবেকানন্দ চান জীবন্ত মানুষের পুজো। শিষ্যবর্গ এবং সতীর্থদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, ‘মানুষের জন্য কাজ (যা পুজোরই শামিল) করে করে তোরা শেষ হয়ে যা, এটাই আমার আশীর্বাদ।’ বিষয়টি শ্রীরামকৃষ্ণ নির্দেশিত ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’রই নামান্তর।
আজ এক দিকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি, দর্শন-মনন-প্রজ্ঞার অপরিসীম বিস্তৃতি, সমাজ-সভ্যতার দ্রুত সম্প্রসারণ, অন্য দিকে মানুষে মানুষে হিংসা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, অভাবনীয় স্খলন-পতন-বিভেদ-বিদ্বেষ-বিপর্যয়-বীভৎস কার্যকলাপ ইত্যাদি তামসিক উল্লাসে প্রচণ্ড ভাবে ব্যাহত শুভচেতনা, নৈতিক মূল্যবোধ। মানুষ দিশেহারা। কেন এমন অবস্থা? তার ব্যাখ্যা এবং নিদান আছে বিবেকানন্দের বীক্ষায়। তিনি মানুষ, যথার্থ মানুষ, ভাল মানুষ, সচেতন-শুভ্র-সুন্দর-বুদ্ধ-শুদ্ধসত্ত্ব-প্রমুক্ত মানুষ চান। জন্মালেই আমরা সবাই মানুষ হয়ে উঠি না। মানুষ হয়ে উঠতে হয়। চৈতন্যের সম্প্রসারণে মানুষের পশুত্ব থেকে দেবত্বে উত্তরণ। কী ভাবে? মানুষ অন্যান্য পশুর মতোই। এই অ্যানিম্যালিটি থেকে তার উত্তরণ র্যাশনালিটি-তে— বুদ্ধি ও চিন্তার বিকাশে। যা অন্যান্য পশুর মধ্যে ঘটতে দেখা যায় না। পরবর্তী স্তর হল ইন্টেলেকচুয়ালিটি-র, অর্থাৎ মনন ও প্রজ্ঞায় উত্তরণ। তার পর নোবিলিটি— এই আভিজাত্য ধনসম্পদের দিক থেকে নয়, ভাবনার সমৃদ্ধিতে, চিন্তার ঐশ্বর্যে, উদ্দীপনার কৌলীন্যে। পরের স্তর হিউম্যানিটি— মানবতার আলোকিত ভুবন। জীবনে জীবন সংযুক্তির প্রত্যয়। সবশেষে ডিভিনিটি—দেবত্বের উত্তুঙ্গে উত্তরণ। এই দেবতা হয়ে ওঠার অর্থ স্বামীজির কথায়, ‘মান’ আর ‘হুঁশ’ সংবলিত প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা। মানুষ হয়ে সর্বার্থে পিছিয়ে পড়া অজ্ঞ, কাতর, শোষিত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত মানুষজনের পাশে থেকে জীবনের মূল স্রোতে শামিল করার বিষয়টিকে বিবেকানন্দ গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষ ভাবেই।
আমরা জানি, পৃথিবীতে যত বড় বড় কাজ হয়েছে, তার মূলে আছে আত্মবোধ ও আত্মবিশ্বাসের জাগরণ। আর আত্মবিশ্বাস থেকেই আসে আস্তিকতা। স্বামীজির ভাষায়, ‘যে নিজেকে (মানুষ) বিশ্বাস করে না, সে নাস্তিক— আর যারা হাজারটা দেবদেবীতে বিশ্বাস না করেই শুধু নিজের উপর বিশ্বাস রাখে, আত্মবোধে ভর দিয়ে সচেতন হয় সে-ই আস্তিক।’ প্রসঙ্গত, তিনি অগ্নিময় আত্মবিশ্বাসের কথা বলেন। আসে গ্রিক পুরাণের সংগ্রামী প্রমিথিউসের কথা। আবার আমরা দেখি তাঁর মানসপুত্র সুভাষচন্দ্র বসুকে। অগ্নিময় আত্মবিশ্বাস নিয়েই ব্রিটিশ সেনার বিরুদ্ধে গড়েছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনী।
আমরা সবাই আত্মপরতায় বাঁচতে চাই। পরার্থে জীবন উৎসর্গের বিষয়টি যেন থেকে যায় বাক্যবন্ধনীতে। এই আত্মপরতা থেকেই দেশ ও জাতির প্রতি আসে অবজ্ঞা। এই অবজ্ঞা-অবহেলার কারণেই বিচ্ছিন্নতাবোধের মাথা চাড়া দেওয়া, জাতীয় সংহতির বিপন্নতা, জাতীয়তাবাদ-জাতীয়তাবোধের অবমাননা। মহাসমাধির আগে ঢাকা নগরীতে দাঁড়িয়ে বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘আগামী পঞ্চাশ বছর আমাদের গরীয়সী ভারতমাতাই আমাদের আরাধ্য দেবতা হোন। অন্যান্য অকেজো দেবতাদের এই কয়েক বছর ভুললে কোন ক্ষতি নেই। তাঁরা এখন ঘুমোচ্ছেন।’ সর্বস্তরের মানুষের মনে স্বদেশ ও মাতৃভূমিকে বিবেকানন্দ সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাই নিজে নগ্ন পায়ে ভারতবর্ষ পরিক্রমা করেন। দরিদ্রজনের পর্ণকুটিরে যে পদধূলি নিয়ে গিয়েছেন তিনি, সেই পদধূলি নিয়েই পৌঁছেছেন রাজার রাজপ্রাসাদে। ভাঙ্গির দেওয়া হুঁকোর সঙ্গে রাজার দেওয়া দামি চুরুটের কোনও ভেদ রাখেননি। প্রকৃত ভারতবর্ষ ঠিক কোথায়, তার অন্বেষণই ছিল এর মূলে। কন্যাকুমারিকার শিলাখণ্ডে তিন দিন তিন রাত অনাহারে, ধ্যানস্তব্ধতায় ভারতবর্ষের মানুষের উত্থানের উপায় খুঁজে ফিরেছেন। পাশ্চাত্যে যাত্রা তো তারই ফল।
দেশ থেকে দেশান্তরে, অবশেষে আন্তর্জাতিকতায়। সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের নিজস্ব কোনও দেশ থাকার কথা নয়, সব দেশই তো তাঁর দেশ! তিনি বিশ্বনাগরিক। সকল মানুষের এই ‘আইডেন্টিটি’-র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট তিনি। তাই তিনি আন্তর্জাতিক একটি সংগঠন, আন্তর্জাতিক বিধান এবং আন্তর্জাতিক সংহতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিশেষ ভাবে অনুধাবন করেন এবং তার বাস্তবায়ন চান। আসলে দেশ-মহাদেশের সীমা অতিক্রম করেই তো মানুষ হয়ে ওঠে বিশ্বনাগরিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লিগ অব নেশনস (১৯১৯), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জ (১৯৪৫) গঠিত হয়, যা বিবেকানন্দের অভীপ্সিত। কিন্তু তাঁর চিন্তাভাবনা সেখানে প্রতিফলিত হয়নি। ছোট-বড় সব দেশ, সব মানুষ সেখানে সমান অধিকার পায়নি। বিশ্বের তাবৎ মানুষের সঙ্গে আত্মিক যোগ সংস্থাপিত হয়েছিল বলেই সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে গঙ্গার তীরে দ্বিতল বাসগৃহের বারান্দায় মধ্যরাতে বসে ফিজির কাছে অগ্ন্যুৎপাতে বহু মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করেছেন প্রকাশ্যে খবর জানার আগেই। সত্যি হল ‘বুকের মাঝে’ ‘বিশ্বলোক’-এর সাড়া পাওয়া।
ধর্ম নিয়ে আজ পৃথিবী সন্ত্রস্ত। মৌলবাদীদের আস্ফালন সর্বত্র। মানুষ বিপন্ন। বিবেকানন্দ মন ও মুখের সত্যতায় স্পষ্টত জানান‘ধর্ম মানুষের বন্ধু।’ তা কোনও শর্তাধীন নয়। বিনিময়যোগ্য স্বার্থের আদানপ্রদানে সঙ্কুচিতও নয়। ধর্ম বিবর্তনের পথেই এগোয়। ধর্ম সমাজের দায় বহন করে। নিরন্ন মানুষের জন্য অন্ন, অসুস্থ প্রপীড়িতের জন্য ত্রাণ-সেবা, অনাথ-বিধবার অশ্রুমোচনের দায়িত্ব ধর্মকেই নিতে হয়।
পুণঃপ্রচারে বিনীত -
প্রণয় সেন
বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন যে, দেবতা আকাশ থেকে নামেন না বা মাটি ফুঁড়েও ওঠেন না। বিবেকানন্দ চান জীবন্ত মানুষের পুজো। শিষ্যবর্গ এবং সতীর্থদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, ‘মানুষের জন্য কাজ (যা পুজোরই শামিল) করে করে তোরা শেষ হয়ে যা, এটাই আমার আশীর্বাদ।’ বিষয়টি শ্রীরামকৃষ্ণ নির্দেশিত ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’রই নামান্তর।
আজ এক দিকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি, দর্শন-মনন-প্রজ্ঞার অপরিসীম বিস্তৃতি, সমাজ-সভ্যতার দ্রুত সম্প্রসারণ, অন্য দিকে মানুষে মানুষে হিংসা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, অভাবনীয় স্খলন-পতন-বিভেদ-বিদ্বেষ-বিপর্যয়-বীভৎস কার্যকলাপ ইত্যাদি তামসিক উল্লাসে প্রচণ্ড ভাবে ব্যাহত শুভচেতনা, নৈতিক মূল্যবোধ। মানুষ দিশেহারা। কেন এমন অবস্থা? তার ব্যাখ্যা এবং নিদান আছে বিবেকানন্দের বীক্ষায়। তিনি মানুষ, যথার্থ মানুষ, ভাল মানুষ, সচেতন-শুভ্র-সুন্দর-বুদ্ধ-শুদ্ধসত্ত্ব-প্রমুক্ত মানুষ চান। জন্মালেই আমরা সবাই মানুষ হয়ে উঠি না। মানুষ হয়ে উঠতে হয়। চৈতন্যের সম্প্রসারণে মানুষের পশুত্ব থেকে দেবত্বে উত্তরণ। কী ভাবে? মানুষ অন্যান্য পশুর মতোই। এই অ্যানিম্যালিটি থেকে তার উত্তরণ র্যাশনালিটি-তে— বুদ্ধি ও চিন্তার বিকাশে। যা অন্যান্য পশুর মধ্যে ঘটতে দেখা যায় না। পরবর্তী স্তর হল ইন্টেলেকচুয়ালিটি-র, অর্থাৎ মনন ও প্রজ্ঞায় উত্তরণ। তার পর নোবিলিটি— এই আভিজাত্য ধনসম্পদের দিক থেকে নয়, ভাবনার সমৃদ্ধিতে, চিন্তার ঐশ্বর্যে, উদ্দীপনার কৌলীন্যে। পরের স্তর হিউম্যানিটি— মানবতার আলোকিত ভুবন। জীবনে জীবন সংযুক্তির প্রত্যয়। সবশেষে ডিভিনিটি—দেবত্বের উত্তুঙ্গে উত্তরণ। এই দেবতা হয়ে ওঠার অর্থ স্বামীজির কথায়, ‘মান’ আর ‘হুঁশ’ সংবলিত প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা। মানুষ হয়ে সর্বার্থে পিছিয়ে পড়া অজ্ঞ, কাতর, শোষিত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত মানুষজনের পাশে থেকে জীবনের মূল স্রোতে শামিল করার বিষয়টিকে বিবেকানন্দ গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষ ভাবেই।
আমরা জানি, পৃথিবীতে যত বড় বড় কাজ হয়েছে, তার মূলে আছে আত্মবোধ ও আত্মবিশ্বাসের জাগরণ। আর আত্মবিশ্বাস থেকেই আসে আস্তিকতা। স্বামীজির ভাষায়, ‘যে নিজেকে (মানুষ) বিশ্বাস করে না, সে নাস্তিক— আর যারা হাজারটা দেবদেবীতে বিশ্বাস না করেই শুধু নিজের উপর বিশ্বাস রাখে, আত্মবোধে ভর দিয়ে সচেতন হয় সে-ই আস্তিক।’ প্রসঙ্গত, তিনি অগ্নিময় আত্মবিশ্বাসের কথা বলেন। আসে গ্রিক পুরাণের সংগ্রামী প্রমিথিউসের কথা। আবার আমরা দেখি তাঁর মানসপুত্র সুভাষচন্দ্র বসুকে। অগ্নিময় আত্মবিশ্বাস নিয়েই ব্রিটিশ সেনার বিরুদ্ধে গড়েছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনী।
আমরা সবাই আত্মপরতায় বাঁচতে চাই। পরার্থে জীবন উৎসর্গের বিষয়টি যেন থেকে যায় বাক্যবন্ধনীতে। এই আত্মপরতা থেকেই দেশ ও জাতির প্রতি আসে অবজ্ঞা। এই অবজ্ঞা-অবহেলার কারণেই বিচ্ছিন্নতাবোধের মাথা চাড়া দেওয়া, জাতীয় সংহতির বিপন্নতা, জাতীয়তাবাদ-জাতীয়তাবোধের অবমাননা। মহাসমাধির আগে ঢাকা নগরীতে দাঁড়িয়ে বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘আগামী পঞ্চাশ বছর আমাদের গরীয়সী ভারতমাতাই আমাদের আরাধ্য দেবতা হোন। অন্যান্য অকেজো দেবতাদের এই কয়েক বছর ভুললে কোন ক্ষতি নেই। তাঁরা এখন ঘুমোচ্ছেন।’ সর্বস্তরের মানুষের মনে স্বদেশ ও মাতৃভূমিকে বিবেকানন্দ সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাই নিজে নগ্ন পায়ে ভারতবর্ষ পরিক্রমা করেন। দরিদ্রজনের পর্ণকুটিরে যে পদধূলি নিয়ে গিয়েছেন তিনি, সেই পদধূলি নিয়েই পৌঁছেছেন রাজার রাজপ্রাসাদে। ভাঙ্গির দেওয়া হুঁকোর সঙ্গে রাজার দেওয়া দামি চুরুটের কোনও ভেদ রাখেননি। প্রকৃত ভারতবর্ষ ঠিক কোথায়, তার অন্বেষণই ছিল এর মূলে। কন্যাকুমারিকার শিলাখণ্ডে তিন দিন তিন রাত অনাহারে, ধ্যানস্তব্ধতায় ভারতবর্ষের মানুষের উত্থানের উপায় খুঁজে ফিরেছেন। পাশ্চাত্যে যাত্রা তো তারই ফল।
দেশ থেকে দেশান্তরে, অবশেষে আন্তর্জাতিকতায়। সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের নিজস্ব কোনও দেশ থাকার কথা নয়, সব দেশই তো তাঁর দেশ! তিনি বিশ্বনাগরিক। সকল মানুষের এই ‘আইডেন্টিটি’-র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট তিনি। তাই তিনি আন্তর্জাতিক একটি সংগঠন, আন্তর্জাতিক বিধান এবং আন্তর্জাতিক সংহতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিশেষ ভাবে অনুধাবন করেন এবং তার বাস্তবায়ন চান। আসলে দেশ-মহাদেশের সীমা অতিক্রম করেই তো মানুষ হয়ে ওঠে বিশ্বনাগরিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লিগ অব নেশনস (১৯১৯), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জ (১৯৪৫) গঠিত হয়, যা বিবেকানন্দের অভীপ্সিত। কিন্তু তাঁর চিন্তাভাবনা সেখানে প্রতিফলিত হয়নি। ছোট-বড় সব দেশ, সব মানুষ সেখানে সমান অধিকার পায়নি। বিশ্বের তাবৎ মানুষের সঙ্গে আত্মিক যোগ সংস্থাপিত হয়েছিল বলেই সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে গঙ্গার তীরে দ্বিতল বাসগৃহের বারান্দায় মধ্যরাতে বসে ফিজির কাছে অগ্ন্যুৎপাতে বহু মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করেছেন প্রকাশ্যে খবর জানার আগেই। সত্যি হল ‘বুকের মাঝে’ ‘বিশ্বলোক’-এর সাড়া পাওয়া।
ধর্ম নিয়ে আজ পৃথিবী সন্ত্রস্ত। মৌলবাদীদের আস্ফালন সর্বত্র। মানুষ বিপন্ন। বিবেকানন্দ মন ও মুখের সত্যতায় স্পষ্টত জানান‘ধর্ম মানুষের বন্ধু।’ তা কোনও শর্তাধীন নয়। বিনিময়যোগ্য স্বার্থের আদানপ্রদানে সঙ্কুচিতও নয়। ধর্ম বিবর্তনের পথেই এগোয়। ধর্ম সমাজের দায় বহন করে। নিরন্ন মানুষের জন্য অন্ন, অসুস্থ প্রপীড়িতের জন্য ত্রাণ-সেবা, অনাথ-বিধবার অশ্রুমোচনের দায়িত্ব ধর্মকেই নিতে হয়।
পুণঃপ্রচারে বিনীত -
প্রণয় সেন
0 comments :
Post a Comment