হরি মহারাজ স্বামীজীর কথা বলতে খুব উৎসাহ বোধ করতেন। একদিন বলছেন, স্বামীজী তখন বোম্বাইয়ে এক ব্যারিস্টারের বাড়ীতে। খুঁজতে খুঁজতে আমি ও মহারাজ সেখানে উপস্থিত। তামাক খাচ্ছিলেন। আমাদের দেখে হুঁকো হাতে করেই ছুটে এলেন। মুখে একটি শ্লোক—অহংকারঃ সুরাপানং গৌরবং ঘোর-রৌরকম্।/ প্রতিষ্ঠা শূকরী-বিষ্ঠা ত্রয়ং তক্ত্বা সুখীভব।।
স্বামীজী ঠাকুরকে নিজের মা-ভাইয়ের জীবিকার ব্যবস্থা করবার জন্য মা কালীকে অনুরোধ করতে বলেছিলেন। ঠাকুর বলছেন, ‘‘বলিস কি, আমার এসব কথা মাকে বলতে নেই।’’ খুব পীড়াপীড়ি করায় বললেন, ‘‘যা, তুই ঘরে গিয়ে প্রার্থনা কর, যা চাইবি তাই পাবি।’’ নিজে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন—বড়ই উদ্বেগ, নরেন কি চায়—খুবই উৎকণ্ঠিতভাবে অবস্থান করছেন। কিছুক্ষণ পরে কাঁদতে কাঁদতে স্বামীজী বের হয়ে আসছেন। ‘‘কিরে কাঁদিস কেন? চেয়েছিস তো? কি চাইলি বল দেখি?’’ রোরুদ্যমান স্বামীজী বললেন, ‘‘আর কিছু চাইতে পারলাম না, বললাম, মা, জ্ঞান দাও, বিবেক দাও, ভক্তি দাও।’’ ঠাকুর শুনেই স্বামীজীকে দৃঢ় আলিঙ্গনে বদ্ধ করলেন—খুব খুশী হলেন। এরপর ঠাকুর আমাদের কাছে বলছেন, ‘‘দেখ দেখি কি অধিকারী পুরুষ। আর কিছুই চাইতে পারল না।’’ ভেতরে গলদ নেই—বাইরে গলদ কোথা হতে আসবে? দেখ, স্বামীজী কতটা মহাপ্রাণ ছিলেন! ঠাকুর এক ব্যক্তির চরিত্রে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে সকলকে তার বাড়িতে আহারাদি করতে নিষেধ করেন। অপরের কাছ থেকে তা জানতে পেরে তিনি দুজন গুরুভাইকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়ীতে আহারাদি করলেন এবং ফিরে এসে সব ব্যাপার ঠাকুরকে নিবেদন করলেন। ঠাকুর ভয়ানক রেগে গেলেন—স্বামীজী কাঁদতে লাগলেন। এরপর একদিন ঐ ব্যক্তিকে ঠাকুরের কাছে এনে, ‘‘ওর উন্নতি হোক—ধর্মজ্ঞান এ জীবনেই লাভ হোক’’, এরূপ করে দিতে অনুরোধ করেন। ঠাকুর বললেন, ‘‘এ জন্মে হবে না।’’ পুনরায় ধরপাকড়—স্বামীজী বলছেন, ‘‘আপনি না করে দিলে এ যাবে কোথায়?’’ ঠাকুর—‘‘কি করব, বলছি হবে না।’’ পুনরায় অনুরোধ—পীড়াপীড়ি। ‘‘আপনি ছাড়লে ও দাঁড়ায় কোথায়?’’ ঠাকুর তখন বলছেন, ‘‘যা, যা, এখন যা’’ তারপর বললেন, ‘‘যা মৃত্যুকালে মুক্তি লাভ হবে।’’
স্বামীজীর ধ্যান ধারণার ফল করায়ত্ত হচ্ছে না দেখে একদিন ঠাকুরকে অনুযোগ করছেন, ‘‘কিছু হচ্ছে না, কি করি’’ ইত্যাদি। তার উত্তরে ঠাকুর বললেন, ‘‘সে কিরে, আমি তোকে ভাল মনে করতাম। খানদানি চাষা যে, সে হাজাশুকো মানে না। তার স্বভাবই চাষ করা, তা জল হোক বা না হোক, ফসল হবার নিশ্চিন্ত আশা থাকুক বা না থাকুক—সে চাষের কাজ ছেড়ে অন্য কিছুই করতে পারে না। ‘স্বামীজী তামাক খান’ নিরামিষাশী নন এজন্য আমাদের মধ্যেই একজন স্বামীজীকে বলেছিলেন, ‘‘দেখ, তোমার অভ্যাসগুলো শোধরান দরকার, নতুবা আমাকে তোমার জন্য অনেক লোকের কাছে জবাবদিহি হতে হয়।’’ সে মনে করেছিল স্বামীজী খুশি হয়ে তাকে কৃতজ্ঞতা জানাবেন, কিন্তু তিনি অতিশয় শান্ত ভাবে বললেন, ‘‘তুই তোর কাজ কর। আমাকে defend (সমর্থন) করবার কোন আবশ্যক নাই।’’ স্বামীজী কেমন স্বচ্ছ—খাড়া হয়ে রয়েছেন। কারও ওপর ঠেস দেওয়া, কারও recommendation-এর (সমর্থন) ওপর আপনাকে জিইয়ে রাখা তাঁর ধাতে ছিল না।
‘জীবন্মুক্তি সুখপ্রাপ্তি—স্বামী তুরীয়ানন্দ-স্মৃতি-ইডা আন্সেল’
পুণঃপ্রচারে বিনীত -
প্রণয় সেন
শ্লোকটি শুনে আমার নিশ্চিত ধারণা হল যে স্বামীজী ঐ দোষত্রয় থেকে বিমুক্ত হয়েছেন। অতঃপর নানা কথার পর, আমাদের সঙ্গেই সেখান থেকে চলে এলেন। বলতে লাগলেন, ‘ভাই, ধর্মকর্ম কতদূর কি হল জানি না, কিন্তু বড্ড feel করছি; সকলের জন্যই প্রাণ কেঁদে আকুল হচ্ছে!’ এ শুনে আমাদের বুদ্ধদেবের কথা মনে হলো। স্বামীজীর শরীর তখন সেরেছে, চেহারা অতি সুন্দর হয়েছে। হরি মহারাজ বলছেন, স্বামীজী আমেরিকা থেকে ফিরে এসেছেন। ভিড়ে দুই তিন জায়গায় দেখা হলো না। G. C (গিরিশবাবু)-কে পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে দিলেন না। বললেন, ‘ওতে আমার অকল্যাণ হবে’। মাস্টারমশায়ের দাড়ি নেড়ে দিলেন। কত সময় বলেছেন, ‘‘এমন সব ভাব দিয়ে গেলাম যাতে দু-শ বছরের মধ্যে আর কিছু করতে হবে না—কেবল দাগা বুলিয়ে গেলেই চলবে।’’ অনেক সময় বলতেন, ‘‘এত খেটেখুটে মন প্রস্তুত হল, কিন্তু মা কেবল বলছেন, ‘চলে আয়—চলে আয়।’ কাজের কিছুই করা হল না।’’ ‘—’ মহাশয় প্রভৃতি চিকাগো ধর্মসভায় গিয়েছিলেন, কিন্তু স্বামীজী বলতেন, ‘‘ও সব কিছু না। যা কিছু ব্যাপার হবে তা কেবল (নিজের বুকে আঙুল রেখে) এর জন্য।’’
স্বামীজী ঠাকুরকে নিজের মা-ভাইয়ের জীবিকার ব্যবস্থা করবার জন্য মা কালীকে অনুরোধ করতে বলেছিলেন। ঠাকুর বলছেন, ‘‘বলিস কি, আমার এসব কথা মাকে বলতে নেই।’’ খুব পীড়াপীড়ি করায় বললেন, ‘‘যা, তুই ঘরে গিয়ে প্রার্থনা কর, যা চাইবি তাই পাবি।’’ নিজে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন—বড়ই উদ্বেগ, নরেন কি চায়—খুবই উৎকণ্ঠিতভাবে অবস্থান করছেন। কিছুক্ষণ পরে কাঁদতে কাঁদতে স্বামীজী বের হয়ে আসছেন। ‘‘কিরে কাঁদিস কেন? চেয়েছিস তো? কি চাইলি বল দেখি?’’ রোরুদ্যমান স্বামীজী বললেন, ‘‘আর কিছু চাইতে পারলাম না, বললাম, মা, জ্ঞান দাও, বিবেক দাও, ভক্তি দাও।’’ ঠাকুর শুনেই স্বামীজীকে দৃঢ় আলিঙ্গনে বদ্ধ করলেন—খুব খুশী হলেন। এরপর ঠাকুর আমাদের কাছে বলছেন, ‘‘দেখ দেখি কি অধিকারী পুরুষ। আর কিছুই চাইতে পারল না।’’ ভেতরে গলদ নেই—বাইরে গলদ কোথা হতে আসবে? দেখ, স্বামীজী কতটা মহাপ্রাণ ছিলেন! ঠাকুর এক ব্যক্তির চরিত্রে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে সকলকে তার বাড়িতে আহারাদি করতে নিষেধ করেন। অপরের কাছ থেকে তা জানতে পেরে তিনি দুজন গুরুভাইকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়ীতে আহারাদি করলেন এবং ফিরে এসে সব ব্যাপার ঠাকুরকে নিবেদন করলেন। ঠাকুর ভয়ানক রেগে গেলেন—স্বামীজী কাঁদতে লাগলেন। এরপর একদিন ঐ ব্যক্তিকে ঠাকুরের কাছে এনে, ‘‘ওর উন্নতি হোক—ধর্মজ্ঞান এ জীবনেই লাভ হোক’’, এরূপ করে দিতে অনুরোধ করেন। ঠাকুর বললেন, ‘‘এ জন্মে হবে না।’’ পুনরায় ধরপাকড়—স্বামীজী বলছেন, ‘‘আপনি না করে দিলে এ যাবে কোথায়?’’ ঠাকুর—‘‘কি করব, বলছি হবে না।’’ পুনরায় অনুরোধ—পীড়াপীড়ি। ‘‘আপনি ছাড়লে ও দাঁড়ায় কোথায়?’’ ঠাকুর তখন বলছেন, ‘‘যা, যা, এখন যা’’ তারপর বললেন, ‘‘যা মৃত্যুকালে মুক্তি লাভ হবে।’’
স্বামীজীর ধ্যান ধারণার ফল করায়ত্ত হচ্ছে না দেখে একদিন ঠাকুরকে অনুযোগ করছেন, ‘‘কিছু হচ্ছে না, কি করি’’ ইত্যাদি। তার উত্তরে ঠাকুর বললেন, ‘‘সে কিরে, আমি তোকে ভাল মনে করতাম। খানদানি চাষা যে, সে হাজাশুকো মানে না। তার স্বভাবই চাষ করা, তা জল হোক বা না হোক, ফসল হবার নিশ্চিন্ত আশা থাকুক বা না থাকুক—সে চাষের কাজ ছেড়ে অন্য কিছুই করতে পারে না। ‘স্বামীজী তামাক খান’ নিরামিষাশী নন এজন্য আমাদের মধ্যেই একজন স্বামীজীকে বলেছিলেন, ‘‘দেখ, তোমার অভ্যাসগুলো শোধরান দরকার, নতুবা আমাকে তোমার জন্য অনেক লোকের কাছে জবাবদিহি হতে হয়।’’ সে মনে করেছিল স্বামীজী খুশি হয়ে তাকে কৃতজ্ঞতা জানাবেন, কিন্তু তিনি অতিশয় শান্ত ভাবে বললেন, ‘‘তুই তোর কাজ কর। আমাকে defend (সমর্থন) করবার কোন আবশ্যক নাই।’’ স্বামীজী কেমন স্বচ্ছ—খাড়া হয়ে রয়েছেন। কারও ওপর ঠেস দেওয়া, কারও recommendation-এর (সমর্থন) ওপর আপনাকে জিইয়ে রাখা তাঁর ধাতে ছিল না।
‘জীবন্মুক্তি সুখপ্রাপ্তি—স্বামী তুরীয়ানন্দ-স্মৃতি-ইডা আন্সেল’
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নূতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নূতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নূতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
পুণঃপ্রচারে বিনীত -
প্রণয় সেন
0 comments :
Post a Comment