-স্বামীজী! জীবনটা কি?
-একটা অন্তর্নিহিত শক্তি যেন ক্রমাগত স্ব-স্ব রূপে ব্যক্ত হইবার জন্য অবিরাম চেষ্টা করিতেছে, আর বহিঃপ্রকৃতি তাহাকে দাবাইয়া রাখিতেছে। এই সংগ্রামের নামই জীবন।
উত্তর দিলেন সন্ন্যাসী। তাঁহার গম্ভীর কণ্ঠে স্বীয় ত্যাগকঠোর জীবনের নিবিড় অনুভূতির ভাষা ঝঙ্কৃত হইল। মহারাজা বিমুগ্ধ হইলেন। পুনরায় প্রশ্ন করিলেনঃ
-স্বামীজী! শিক্ষা কি?
-আমার মনে হয়, কয়েকটি ভাবধারার স্নায়বিক সমন্বয়ের নাম শিক্ষা।
তাঁহার সংজ্ঞাটি ব্যাখ্যা করিবার জন্য স্বামীজী আরও বলিলেন, যতক্ষণ না ভাব-ধারণা সহজ জ্ঞানে রূপান্তরিত হয় ততক্ষণ তাহাকে চেতনার প্রত্যক্ষ সজীব অংশরূপে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। ইহার পর স্বামীজী মহারাজকে শ্রীরামকৃষ্ণ জীবনী শুনাইলেন। নিবিষ্ট একাগ্রতার সহিত তিনি সেই পবিত্র বর্ণনা শুনিলেন। স্বামীজীর অধর হইতে আধ্যাত্মিক অমৃতসুধা ঝরিতে লাগিল আর মহারাজার আত্মাকে ঘিরিয়া রহিল সত্যানুরাগের জ্বলন্ত শিখা।
দিনের পর দিন সন্ন্যাসীর জ্ঞানবাণী শুনিয়া মহারাজা তাঁহাকে সঙ্গীরূপে খেত্রীতে যাইবার অনুরোধ জানাইলেন। ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া স্বামীজী সম্মতি জ্ঞাপন করিলেন। কিছুদিন পর যখন মহারাজা তাঁহার লোকলস্কর সমভিব্যাহারে আবু হইতে ট্রেনপথে জয়পুর রওয়ানা হইলেন তখন সঙ্গে রহিলেন স্বামীজী। জয়পুর হইতে খেতরী পর্যন্ত সুদীর্ঘ নব্বই মাইল পথ তাঁহারা রাজ-যানে অতিক্রম করিলেন। খেত্রীতে পৌঁছিবার কয়েকদিন পরই স্বামীজী মহারাজকে দীক্ষা দিলেন। বিশিষ্ট শিষ্যে রূপান্তরিত হইলেন মহারাজা অজিত সিং। গুরু জানিতেন, শিষ্যের কি গভীরতা, কি আন্তরিকতা। তাহা তিনি মহারাজকে অতিশয় প্রিয়জ্ঞান করিতেন এবং দেশের উন্নতিকর্মে তাঁহার অবদান উল্লেখযোগ্য হইবে এই মহৎ আশা পোষণ করিতেন। ভবিষ্যতে স্বামীজী যখন আমেরিকায় ছিলেন তখন মহারাজা অজিত সিংকে তাঁহার কার্যাবলীর বিবরণ পাঠাইতেন এবং যে-কয়েকজন বিশেষ কৃপাধন্য ব্যক্তিকে স্বামীজী তাঁহার চিরস্মরণীয় পত্রাবলী লিখিয়াছেন মহারাজ অজিত সিং তাঁহাদের একজন।
১৮৯১ সালের চিরস্মরণীয় ৪ঠা জুন দিবসে ভবিতব্য যখন এই দুই মহাত্মাকে মুখোমুখি দাঁড় করাইয়া দেন তখন মহান্ মহারাজার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি স্বামীজীর অন্তর্নিহিত প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনাকে চিনিয়াছিল। তখনও তিনি এক সাধারণ সাধু মাত্র, এমনকি স্বীয় জন্মস্থানেও তিনি তখন অখ্যাত। অজিত সিং ও স্বামীজীর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ ছিল। এই কারণেই যে-মুহূর্তে মহারাজা তাঁহাকে খেত্রী যাইবার অনুরোধ জানাইয়াছিলেন সেই মুহূর্তে স্বামীজী সম্মত হন এবং একটানা পাঁচমাস তাঁহার সহিত অতিবাহিত করেন। ইহা এক অস্বাভাবিক ঘটনা, কারণ স্বামীজী তখন পরিব্রাজক এবং পরিব্রাজকরূপে কোথাও তিনি বেশীদিন অবস্থান করেন নাই।
‘আবুতে’ অবস্থানকালেই তাঁহাদের প্রাথমিক আলাপ প্রগাঢ় বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হয়। প্রথম সাক্ষাৎকাল হইতেই পরস্পর পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন। মুন্সী জগমোহনলালের মাধ্যমে যখন পরস্পরের সাক্ষাৎ ঘটে মহারাজা স্বামীজীর ব্যক্তিত্বে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং তাহার পর প্রতিদিনই তাঁহার দর্শনলাভ ও সঙ্গলাভের উদ্দেশ্যে দীর্ঘসময় বাক্যালাপে অতিবাহিত করিতেন।
মনে হয়, তাঁহারা কেবলমাত্র শাস্ত্রালোচনায় নিযুক্ত থাকিতেন এমন নয়। কখনও ধর্ম ও দর্শন আলোচনা, কখনও বহির্দৃশ্য উপভোগ, কখনও বা অশ্বারোহণ আবার কখনও বা পরস্পরের সঙ্গীত পরিবেশন— এইভাবে তাঁহাদের সময় কাটিত। ইহা সর্বজনবিদিত যে স্বামীজী সুকণ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন এবং মহারাজা ছিলেন রাজপুতানার একজন বিখ্যাত বীণাবাদক। অতএব, সঙ্গীতের স্বর্গরাজ্যে এই দুই মহাত্মার মিলন ঘটিয়া থাকা আশ্চর্যের বিষয় নহে। মহারাজা ভালো হারমোনিয়াম বাজাইতেন। স্বামীজী যখন গান ধরিতেন মহারাজা তখন হয় হারমোনিয়াম না হয় বীণা তুলিয়া তাঁহার কণ্ঠকে অনুসরণ করিতেন। তখন স্বীয় অভিজাত পদমর্যাদার কথা বিস্মৃত হইতেন মহারাজা। রাজযোগ এবং ভক্তিযোগের সমন্বয় দেখিয়া লোকে তন্ময় হইত। প্রায়ই স্বামীজী মহারাজার সহিত আহারে বসিতেন এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁহার নিকট থাকিতেন।
বেণীশঙ্কর শর্মার ‘স্বামী বিবেকানন্দ জীবনের এক বিস্মৃত অধ্যায়’
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
পুণঃপ্রচারে বিনীত
প্রণয় সেন
প্রণয়
-একটা অন্তর্নিহিত শক্তি যেন ক্রমাগত স্ব-স্ব রূপে ব্যক্ত হইবার জন্য অবিরাম চেষ্টা করিতেছে, আর বহিঃপ্রকৃতি তাহাকে দাবাইয়া রাখিতেছে। এই সংগ্রামের নামই জীবন।
উত্তর দিলেন সন্ন্যাসী। তাঁহার গম্ভীর কণ্ঠে স্বীয় ত্যাগকঠোর জীবনের নিবিড় অনুভূতির ভাষা ঝঙ্কৃত হইল। মহারাজা বিমুগ্ধ হইলেন। পুনরায় প্রশ্ন করিলেনঃ
-স্বামীজী! শিক্ষা কি?
-আমার মনে হয়, কয়েকটি ভাবধারার স্নায়বিক সমন্বয়ের নাম শিক্ষা।
তাঁহার সংজ্ঞাটি ব্যাখ্যা করিবার জন্য স্বামীজী আরও বলিলেন, যতক্ষণ না ভাব-ধারণা সহজ জ্ঞানে রূপান্তরিত হয় ততক্ষণ তাহাকে চেতনার প্রত্যক্ষ সজীব অংশরূপে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। ইহার পর স্বামীজী মহারাজকে শ্রীরামকৃষ্ণ জীবনী শুনাইলেন। নিবিষ্ট একাগ্রতার সহিত তিনি সেই পবিত্র বর্ণনা শুনিলেন। স্বামীজীর অধর হইতে আধ্যাত্মিক অমৃতসুধা ঝরিতে লাগিল আর মহারাজার আত্মাকে ঘিরিয়া রহিল সত্যানুরাগের জ্বলন্ত শিখা।
দিনের পর দিন সন্ন্যাসীর জ্ঞানবাণী শুনিয়া মহারাজা তাঁহাকে সঙ্গীরূপে খেত্রীতে যাইবার অনুরোধ জানাইলেন। ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া স্বামীজী সম্মতি জ্ঞাপন করিলেন। কিছুদিন পর যখন মহারাজা তাঁহার লোকলস্কর সমভিব্যাহারে আবু হইতে ট্রেনপথে জয়পুর রওয়ানা হইলেন তখন সঙ্গে রহিলেন স্বামীজী। জয়পুর হইতে খেতরী পর্যন্ত সুদীর্ঘ নব্বই মাইল পথ তাঁহারা রাজ-যানে অতিক্রম করিলেন। খেত্রীতে পৌঁছিবার কয়েকদিন পরই স্বামীজী মহারাজকে দীক্ষা দিলেন। বিশিষ্ট শিষ্যে রূপান্তরিত হইলেন মহারাজা অজিত সিং। গুরু জানিতেন, শিষ্যের কি গভীরতা, কি আন্তরিকতা। তাহা তিনি মহারাজকে অতিশয় প্রিয়জ্ঞান করিতেন এবং দেশের উন্নতিকর্মে তাঁহার অবদান উল্লেখযোগ্য হইবে এই মহৎ আশা পোষণ করিতেন। ভবিষ্যতে স্বামীজী যখন আমেরিকায় ছিলেন তখন মহারাজা অজিত সিংকে তাঁহার কার্যাবলীর বিবরণ পাঠাইতেন এবং যে-কয়েকজন বিশেষ কৃপাধন্য ব্যক্তিকে স্বামীজী তাঁহার চিরস্মরণীয় পত্রাবলী লিখিয়াছেন মহারাজ অজিত সিং তাঁহাদের একজন।
১৮৯১ সালের চিরস্মরণীয় ৪ঠা জুন দিবসে ভবিতব্য যখন এই দুই মহাত্মাকে মুখোমুখি দাঁড় করাইয়া দেন তখন মহান্ মহারাজার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি স্বামীজীর অন্তর্নিহিত প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনাকে চিনিয়াছিল। তখনও তিনি এক সাধারণ সাধু মাত্র, এমনকি স্বীয় জন্মস্থানেও তিনি তখন অখ্যাত। অজিত সিং ও স্বামীজীর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ ছিল। এই কারণেই যে-মুহূর্তে মহারাজা তাঁহাকে খেত্রী যাইবার অনুরোধ জানাইয়াছিলেন সেই মুহূর্তে স্বামীজী সম্মত হন এবং একটানা পাঁচমাস তাঁহার সহিত অতিবাহিত করেন। ইহা এক অস্বাভাবিক ঘটনা, কারণ স্বামীজী তখন পরিব্রাজক এবং পরিব্রাজকরূপে কোথাও তিনি বেশীদিন অবস্থান করেন নাই।
‘আবুতে’ অবস্থানকালেই তাঁহাদের প্রাথমিক আলাপ প্রগাঢ় বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হয়। প্রথম সাক্ষাৎকাল হইতেই পরস্পর পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন। মুন্সী জগমোহনলালের মাধ্যমে যখন পরস্পরের সাক্ষাৎ ঘটে মহারাজা স্বামীজীর ব্যক্তিত্বে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং তাহার পর প্রতিদিনই তাঁহার দর্শনলাভ ও সঙ্গলাভের উদ্দেশ্যে দীর্ঘসময় বাক্যালাপে অতিবাহিত করিতেন।
মনে হয়, তাঁহারা কেবলমাত্র শাস্ত্রালোচনায় নিযুক্ত থাকিতেন এমন নয়। কখনও ধর্ম ও দর্শন আলোচনা, কখনও বহির্দৃশ্য উপভোগ, কখনও বা অশ্বারোহণ আবার কখনও বা পরস্পরের সঙ্গীত পরিবেশন— এইভাবে তাঁহাদের সময় কাটিত। ইহা সর্বজনবিদিত যে স্বামীজী সুকণ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন এবং মহারাজা ছিলেন রাজপুতানার একজন বিখ্যাত বীণাবাদক। অতএব, সঙ্গীতের স্বর্গরাজ্যে এই দুই মহাত্মার মিলন ঘটিয়া থাকা আশ্চর্যের বিষয় নহে। মহারাজা ভালো হারমোনিয়াম বাজাইতেন। স্বামীজী যখন গান ধরিতেন মহারাজা তখন হয় হারমোনিয়াম না হয় বীণা তুলিয়া তাঁহার কণ্ঠকে অনুসরণ করিতেন। তখন স্বীয় অভিজাত পদমর্যাদার কথা বিস্মৃত হইতেন মহারাজা। রাজযোগ এবং ভক্তিযোগের সমন্বয় দেখিয়া লোকে তন্ময় হইত। প্রায়ই স্বামীজী মহারাজার সহিত আহারে বসিতেন এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁহার নিকট থাকিতেন।
বেণীশঙ্কর শর্মার ‘স্বামী বিবেকানন্দ জীবনের এক বিস্মৃত অধ্যায়’
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
পুণঃপ্রচারে বিনীত
প্রণয় সেন
প্রণয়
0 comments :
Post a Comment