‘শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, শ্রী সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের উপদেশাবলী'

জ্ঞান-বিচার পুরুষ মানুষ, বাড়ির বারবাড়ি পর্যন্ত যায়। ভক্তি মেয়ে মানুষ, তাই অন্তঃপুর পর্যন্ত যেতে পারে। কলিযুগে ভক্তিযোগই ভাল। ভক্তি দ্বারাও তাঁকে পাওয়া যায়, বেশি বিচার করা ভাল নয়। বেশি বিচার করতে গেলে সব গুলিয়ে যায়। মার পাদপদ্মে ভক্তি থাকলেই হলো।
ভক্তির ‘আমি’তে অহঙ্কার হয় না। অজ্ঞান করে না, বরং ঈশ্বরলাভ করিয়ে দেয়। এ ‘আমি’ আমির মধ্যে নয়। যেমন হিংচে শাক, শাকের মধ্যে নয়, অন্য শাকে অসুখ হয়, কিন্তু হিংচে শাক খেলে পিত্ত নাশ হয়, উলটে উপকার হয়। মিছরি মিষ্টির মধ্যে নয়, অন্য মিষ্টি খেলে অপকার হয়, মিছরি খেলে অম্বল নাশ হয়।


এত জপ করতে হবে, এত ধ্যান করতে হবে, এত যাগযজ্ঞ হোম করবে, এত উপাচারে পূজা করতে হবে, পূজার সময় এই এই মন্ত্র পাঠ করবে, এত উপবাস করতে হবে, তীর্থে যেতে হবে, এতগুলি বলিদান দিতে হবে—এ সব বৈধীভক্তি; এ সব অনেক করতে করতে ক্রমে রাগভক্তি আসে।
ঈশ্বরে ভালবাসা থেকে, অনুরাগ থেকে যে ভক্তি হয় তাকে বলে ‘রাগভক্তি’।
যদি রাগভক্তি হয়—অনুরাগের সহিত ভক্তি—তাহলে তিনি স্থির থাকতে পারেন না।
ভক্তি তাঁর কিরূপ প্রিয়—খোল দিয়ে জাব যেমন গরুর প্রিয়—গব্‌ গব্‌ করে খায়।
রাগভক্তি—শুদ্ধাভক্তি—অহৈতুকী ভক্তি। যেমন প্রহ্লাদের।
তুমি বড়লোকের কাছে কিছু চাও না—কিন্তু রোজ আসো—তাকে দেখতে ভালবাসো। জিজ্ঞাসা করলে বল—‘আজ্ঞা, দরকার কিছু নাই—আপনাকে দেখতে এসেছি।’ এর নাম অহৈতুকী ভক্তি। তুমি ঈশ্বরের কাছে কিছু চাও না—কেবল ভালবাসো।
আবার আছে ঊর্জিতা ভক্তি, তাতে ভাবে হাসে, কাঁদে, নাচে, গায়—ভক্তি যেন উথলে পড়ছে। যেমন চৈতন্যদেবের। রাম লক্ষ্মণকে বললেন, “ভাই, যেখানে দেখবে ঊর্জিতা ভক্তি, সেখানে আমি স্বয়ং বর্তমান জানবে।”
একটি আছে নিষ্ঠাভক্তি। শ্বশুর, শ্বাশুড়ী, দেওর, ভাসুর সবাইয়ের সেবা করে, পা ধোবার জল দেয়, গামছা দেয়, আসন দেয়, কিন্তু পতিকে যেরূপ সেবা করে, সেরূপ সেবা আর কাকেও করে না। পতির সঙ্গে সম্বন্ধ আলাদা। সবাইকে প্রণাম করবে, কিন্তু একটির উপর প্রাণঢালা ভালবাসার নাম নিষ্ঠা। হনুমানের এত নিষ্ঠা যে রাম রূপ বই আর কোন রূপ তার ভাল লাগত না।
এই ভক্তি কিরূপে হয়? প্রথম সাধুসঙ্গ করতে হয়। সাধুসঙ্গ করলে ঈশ্বরীয় বিষয়ে শ্রদ্ধা হয়। শ্রদ্ধার পর নিষ্ঠা, ঈশ্বরকথা বই আর কিছু শুনতে ইচ্ছা করে না; তাঁরই কাজ করতে ইচ্ছা করে।
নিষ্ঠার পর ভক্তি। তারপর ভাব—মহাভাব, প্রেম—বস্তুলাভ।
মহাভাব, প্রেম, অবতারাদির হয়। সংসারী জীবের জ্ঞান, ভক্তের জ্ঞান, আর অবতারের জ্ঞান সমান নয়। সংসারী জীবের জ্ঞান যেন প্রদীপের আলো—শুধু ঘরের ভিতরটি দেখা যায়। সে জ্ঞানে খাওয়া দাওয়া, ঘর করা, শরীর রক্ষা, সন্তান পালন এই সব হয়।
ভক্তের জ্ঞান যেন চাঁদের আলো। ভেতর-বার দেখা যায়, কিন্তু অনেক দূরের জিনিস, কি খুব ছোট জিনিস, দেখা যায় না। অবতারাদির জ্ঞান যেন সূর্যের আলো। ভেতর-বার, ছোট-বড়—তাঁরা সব দেখতে পান।
ভক্তি পাকলে ভাব। ভাব হলে সচ্চিদানন্দকে ভেবে অবাক হয়ে যায়। জীবের এই পর্যন্ত। আবার ভাব পাকলে মহাভাব—প্রেম। যেমন কাঁচা আম আর পাকা আম। বিশ্বাস যত বাড়বে, জ্ঞানও তত বাড়বে। যে গরু বেছে বেছে খায় সে ছিড়িক ছিড়িক করে দুধ দেয়। আর যে গরু শাক-পাতা, খোসা, ভুষি যা দাও, গব্‌ গব্‌ করে খায়, সে গরু ছড় ছড় করে দুধ দেয়।

‘শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, শ্রী সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের উপদেশাবলী'



আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নূতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নূতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।

ভারতের সাধক ও সাধিকা
       পুণঃপ্রচারে বিনীত 
             প্রণয় সেন
                 প্রণয়
Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment