Narmada Parikrama | মা নর্মদার পূর্ণ পরিক্রমা



অধ্যাত্ম পিপাসু মানুষের চিরকাঙ্খিত ও চিরপ্রার্থিত মনোরথ — মা নর্মদার পূর্ণ পরিক্রমা।

যোগাযোগ: ৭৩৬৩৯০৩৮৭৫ / ৭০০১১২৭২৪৮

Contact Us: 7363903875 / 7001127248

সাধারণ দৃষ্টিতে বঙ্গদেশের বেশীরভাগ মানুষ “নর্মদা” শব্দে একটা নদীকে বোঝে। মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের অমরকন্টক থেকে উদ্ভূত হয়ে ১২৮৯ কি.মি.পথ অতিক্রম করে গুজরাট রাজ্যের অন্তর্গত ভারুচ জেলার মিঠিতলাই নামক স্থানে আরব সাগরে বিলীন হয়েছে। 

প্রাচীনকালের মুনি-ঋষিদের দৃষ্টিতে অবশ্য নর্মদা নদীর জলরূপের অন্তরালে সমগ্র বিশ্ব চরাচর পরিব্যাপ্ত করে অখণ্ড চৈতন্য স্বরূপিণী এক দেবী বিরাজিতা রয়েছেন। এই দেবী স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের শরীর থেকে উৎপন্ন। 

পরমেশ্বর শিব সর্বজনের কল্যানার্থে তাঁর কন্যা সরিৎশ্রেষ্ঠা মা নমদাকে মর্ত্যে অবতরণ করিয়েছেন। কলিযুগের সাক্ষাৎদেবী মা নর্মদার তীরে সেই সুপ্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে মুনি-ঋষিগণ তপস্যা করে চলেছেন এবং নর্মদাতট চিরকাল তপস্বীদের তপস্যার প্রভাবে পূত। 

এখনও প্রচুর সাধু-সন্ত-মহাত্মা মা নর্মদার শরণাপন্ন হয়ে তাঁর জলপ্রবাহের পদব্রজে পরিক্রমা করেন। 

এই পরিক্রমা শাস্ত্রবিধি মেনে একবার সম্পূর্ণ করতে পারলে মনুষ্য জীবন ধন্য হয়ে যায়। 

এই পরিক্রমা একটা পূর্ণ তপস্যা যার নাম মহেশ্বর যোগ। 

ব্যাকরণগত দিক থেকে নর্মদা শব্দের অর্থ হলো “নর্মং কল্যানং দদাতি ইতি নর্মদা” (নৃ + মনিন = নর্মন = নৰ্ম + দা = নর্মদা) অর্থাৎ যিনি সকলের কল্যানকারী ও সুখপ্রদাত্রী তিনিই নর্মদা। 

নর্ম শব্দের অর্থ নম্র বা প্রসন্নতা এবং দা শব্দের অর্থ দাতা। 

তাই যিনি সকলকে নম্রতা ও প্রসন্নতা প্রদান করেন তিনিই নর্মদা। এহেন মা নর্মদার জলপ্রবাহকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকাল থেকে অজস্র মুনি-ঋষি ও তপস্বীদের নর্মদা তটে বসবাস এবং শিবলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা করে তাঁর অর্চনা। 

এই কারণে বর্তমানে মা নর্মদার জলপ্রবাহের উভয় তটে অগণিত শিবলিঙ্গ দৃষ্ট হয়। 

শিবপুরাণের জ্ঞানসংহিতায় আছে, “নর্মদা তীরে বহু শিবলিঙ্গ আছেন, তাঁর সংখ্যা নাই। সেই নর্মদা রুদ্রস্বরূপ হয়ে সকলের পাপ হরণ করে চলেছেন।” 


পদব্রজে নর্মদা পরিক্রমার কঠোরতার তুলনায় গাড়ীতে পরিক্রমা বিলাসিতা, কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু সবাই পদব্রজে পরিক্রমার সামর্থ্যও রাখেন না, সময়েরও অভাব; তাই ক্রমান্বয়ে গাড়ীতে পরিক্রমা সাধারণ মানুষের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

শাস্ত্র বলছে, “নরযানং চ অশ্বতরী; হয়াদিসহিতো রথঃ।

তীর্থযাত্রা হি অশক্তানাং যানদোষকরী ন হি।।”

অর্থাৎ, অসমর্থ মানব পালকী, রথ ইত্যাদিতে তীর্থ পরিক্রমা করতে পারে; তা দোষকর নয়। 


“পথ আমারে সেই দেখাবে, যে আমারে চায়। আমি অভয় মনে ছাড়বো তরী, এই শুধু মোর দায়” ভগবান নিজেই বিবিধ রূপে পথনির্দেশিকা দিয়ে দেবেন, যদি আমাদের লক্ষ্য ঠিক থাকে। 

তাঁর দিকে কেউ এক পা অগ্রসর হলে, তিনি ১০০ পা ভক্তের দিকে এগিয়ে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তাই, পথ হারানোর চিন্তা নয়; পথে নামাটাই কাজ। 

এমনি করে চলতে চলতে কোন এক দিন নিশ্চয় জীবনের “ভাঙ্গা পথের রাঙা ধুলায়” তাঁর শ্রীচরণ চিহ্ন ফুটে উঠবে। 


“নর্মদা সরিতাং শ্রেষ্ঠা রুদ্রতেজাৎ বিনিসৃতা। তারয়েৎ সর্বভূতানি স্থাবরাণি চরাণি চ।।”

অর্থাৎ, নর্মদা নদীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠা। তিনি রুদ্র অর্থাৎ শিবের তেজ থেকে উৎপন্না। তিনি স্থাবর-জঙ্গম সর্বভূতকে উদ্ধার করেন, অর্থাৎ মুক্তি দেন।

হিন্দুধর্মে যে সাতটি নদীকে সবচেয়ে পবিত্র মান্য করা হয় (গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু ও কাবেরী), তার মধ্যে শুধুমাত্র মা নর্মদাকেই পরিক্রমা করা হয়।

নর্মদা পরিক্রমা করার অর্থ নর্মদাকে (সাধারণ ভাবে) সর্বদা ডাইনে রেখে একটা পুরো চক্কর খাওয়া। 

সেটা যে উৎস অর্থাৎ অমরকণ্টক থেকেই শুরু করতে হবে, তা কিন্তু নয়। 

যে কোনো জায়গা থেকে শুরু করে পুরো নর্মদাকে ঘুরে আবার সেই স্টার্টিং পয়েন্টে ফিরতে হবে। এর মধ্যে কোথাও কোনও কারণেই নর্মদাকে ক্রস করা যাবে না।

নর্মদা পরিক্রমা অত্যন্ত কঠিন। ঠিক নিয়ম মেনে করতে গেলে পায়ে হেঁটে (এর মধ্যে বর্ষাকালে তিন বা চারমাস হাঁটা বন্ধ থাকবে) তিনবছর তিনমাস তের দিন সময় লাগে। 

নর্মদা পরিক্রমা কোনও লং ডিসট্যান্স রেস নয় যে যেন তেন প্রকারেণ নর্মদাকে একটা পাক খেয়ে ৮১৫x২ = ১৬৩০ মাইল ঘুরে এলাম। 

এটি একটি সম্পূর্ণ তপস্যা।

আগে রাজা-মহারাজারা নাকি পালকি অথবা ঘোড়া বা গরুর গাড়িতে এই পরিক্রমা করতেন। 


এরই আধুনিকতম রূপ হচ্ছে গাড়িতে নর্মদা পরিক্রমা করা।


আমি এই ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ২০ জানুয়ারি ২০২৪ গাড়িতে করে মা নর্মদা পরিক্রমা করলাম। 

একটা খোঁজে গিয়েছিলাম। কী পেলাম, তা এত তাড়াতাড়ি বোঝা সম্ভব নয়। যা পেলাম, তার কিছুটা বলা যায়, কিছুটা অনুভবের যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। 

মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও ছত্তিসগড় এই চারটি প্রদেশের বহু বহু জায়গা দেখলাম, বহু নদনদী জঙ্গল পাহাড় শহর গ্রাম ক্ষেত মন্দির দেবালয় দেবমূর্তি দেখলাম। সবার চেয়ে বেশি দেখলাম বহু রকমের মানুষজন।

আর কিছুটা হলেও চিনলাম ভারতবর্ষের চিরন্তন আত্মাকে।

চিরন্তন ভারতবর্ষকে দেখে এলাম। আর অনুভব করলাম নিজের ক্ষুদ্রত্ব। 

আমার সহযাত্রী যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই উনিশ দিন সবাই একটা পরিবারের মতো একসাথে ছিলাম। অভিজ্ঞতা এক হলেও অনুভব নিশ্চয়ই সব সময় এক হয়নি। 


মা নমর্দা আমার ইষ্টদেবী। গাড়িতে মা নর্মদার পরিক্রমাকালে আমি বহু তীর্থ দর্শন করলাম। কিছু কিছু শৈব তীর্থে প্রবেশ মাত্রই ঐ স্থানের উচ্চ আধ্যাত্মিক প্রভাব অনুভব করেছি। 


স্বয়ং মহাদেব মা নমর্দা জলগর্ভে সর্বদা লিঙ্গরূপ ধারণ করে বিরাজিত থাকেন। সেসব শিবলিঙ্গ ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে শিবভক্তদের গৃহদেবতা হিসাবে পূজিত হন। ভারতবর্ষের বেশীরভাগ মন্দিরে নর্মদেশ্বর মহাদেব প্রতিষ্ঠিত আছেন। 


বাস্তবে পরমাত্মা স্বরূপ শিব শুধু দ্রষ্টা মাত্র আর শক্তি স্বরূপিনী তাঁর কন্যা অর্থাৎ মা নর্মদা এই জগৎ সংসারের পরিচালক। 


মা নর্মদার অশেষ কৃপায় পরিক্রমাকালে পদে পদে আমার সঙ্গে মায়ের উপস্থিতি অনুভব করেছি। কৃপাময়ী মা তাঁর অনেক দিব্যলীলার সাক্ষী আমাকে করেছেন।

স্বয়ং মা নর্মদার কৃপাদৃষ্টি না থাকলে আমার পক্ষে এই পরিক্রমা সম্ভব হতো না। 


নর্মদে হর্ 🙏🏻


অধ্যাত্ম পিপাসু মানুষের চিরকাঙ্খিত ও চিরপ্রার্থিত মনোরথ — মা নর্মদার পূর্ণ পরিক্রমা। 


যোগাযোগ: ৭৩৬৩৯০৩৮৭৫ / ৭০০১১২৭২৪৮


Contact Us: 7363903875 / 7001127248




Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment