স্বামী প্রভবানন্দের ‘বেদান্তের আলোকে খ্রিস্টের শৈলোপদেশ’

স্বর্গীয় পিতা যেমন পূর্ণ, তোমরাও সেরূপ পূর্ণতা লাভ কর। এই বাক্যে যীশু শৈলোপদেশের মূল বক্তব্য তুলে ধরেছেন। মানবজীবনের উদ্দেশ্য কি?— তা এখানে বলা হয়েছে। সকল ধর্মের এই একই মর্মবাণীঃ পূর্ণতার সন্ধান কর, ভগবান লাভ কর।


দৈহিক, বৌদ্ধিক বা নৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ণতা কি হওয়া উচিত, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা আছে— যদিও প্রতি মানুষে তা বিভিন্ন। কিন্তু আধ্যাত্মিক পূর্ণতা কি? যতক্ষণ আমাদের মন স্থান-কাল ও কার্য-কারণ সম্বন্ধযুক্ত আপেক্ষিক জগতে রয়েছে, আমরা ততক্ষণ এ পূর্ণতা জানতে পারব না, কারণ এ হচ্ছে অব্যক্ত। আমাদের একটা অস্পষ্ট ধারণা আছে যে পূর্ণতা বলতে বোঝায় কোন কিছুর সমাপন, একটা স্থায়ী শান্তি বা সিদ্ধিলাভ। অন্য মানুষের তুলনায় প্রত্যেক মানুষ তার কর্মে ও জীবনের প্রতিক্ষেত্রে চায় সিদ্ধি ও পরাকাষ্ঠা। কিন্তু যখন সে জাগতিক লক্ষ্যে পৌঁছায়, তখনও সে তৃপ্ত হয় না। সুন্দর পরিবার, বিশ্বস্ত বন্ধু, স্বাস্থ্য-সম্পদ, যশ ও সৌন্দর্যের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও মানুষ অভাববোধ ও নৈরাশ্যের দ্বারা পীড়িত হয়।
এ কথা সত্য যে আমাদের জাগতিক বাসনা সাময়িকভাবে তৃপ্ত হয় এবং আমরা কিছু পরিমাণ ভোগ ও সফলতা লাভ করি। কিন্তু আমরা সর্বদা ভুলে যাই যে এগুলি অস্থায়ী। আমরা যদি ভোগ ও সফলতা গ্রহণ করি তবে আমাদের যন্ত্রণা ও ব্যর্থতা গ্রহণের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রাচীন ভারতের দার্শনিক কপিল এই পূর্ণাবস্থাকে নেতিবাচক শব্দে প্রকাশ করেছেন: ‘‘দুঃখের আত্যন্তিক বিরতি’’। বৈদিক ঋষিরা ইতিবাচক শব্দে এভাবে বোঝাতে চেয়েছেন: সৎ বা অমর জীবন; চিৎ বা অনন্ত জ্ঞান; এবং আনন্দ বা শাশ্বত প্রেম ও পরমসুখ। প্রত্যেক মানবিক প্রচেষ্টার লক্ষ্য (যদিও তা অজ্ঞাতভাবে ও ভ্রমপথে চালিত) হচ্ছে সচ্চিদানন্দ লাভ। ভগবৎদর্শনই যে জীবনের উদ্দেশ্য— আমরা অধিকাংশই এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই, তাই বার বার একই ভোগ এবং তার ফলস্বরূপ যন্ত্রণা পাই। অস্থায়ী জাগতিক বস্তু প্রাপ্তির জন্য আমরা শক্তির অপচয় করি এবং সসীমের মধ্যে অমরতা খুঁজি। নানাবিধ ভোগ ও যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে অভিজ্ঞতা লাভের পর আমাদের বিবেকবুদ্ধির উদয় হয়। তখন আমরা বুঝি যে এ জগতে কোন বস্তু আমাদের চিরস্থায়ী শান্তি দিতে পারে না, এবং শাশ্বত সুখ ও আনন্দ রয়েছে একমাত্র ঈশ্বর।
পূর্ণতা লাভের জন্য আমাদের সংগ্রাম করতেই হবে, কারণ উহাই আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার। সেন্ট পলের কথায়: ‘‘চৈতন্য নিজেই আমাদের আত্মাতে প্রতিভাত হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে আমরা ঈশ্বরের সন্তান। যেহেতু সন্তান সেহেতু উত্তরাধিকারী— ভগবানের উত্তরাধিকারী এবং এ উত্তরাধিকারে আমরা খ্রীস্টের মতো সমান অংশীদার।
কিন্তু কোথায় পূর্ণতা? কোথায় ঈশ্বর? বেদান্ত মতে এই নামরূপাত্মক জগতের অন্তরালে একটা দৈবী ভূমি আছে এবং তা হচ্ছে ব্রহ্ম। ব্রহ্ম সর্বব্যাপী; সুতরাং তা জগতের প্রতি প্রাণী ও বস্তুতে বিদ্যমান, আবার সব কিছুর পারেও। বিশ্বব্যাপিতার প্রতি লক্ষ্য করে ব্রহ্মকে বলা হয় আত্মা; এটা একটা নাম মাত্র। প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্ম ও আত্মার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই— একই বস্তু। মন যখন সাধনার দ্বারা নির্মল হয়ে অন্তর্জগৎ দেখতে সক্ষম হয়, তখন মানুষ উপলব্ধি করে যে, তার স্বরূপ ব্রহ্মই। মানুষের অন্তর্নিহিত প্রকৃত সত্তা বা দেবত্বের বিকাশই হচ্ছে পূর্ণতালাভ। সমস্ত অতীন্দ্রিয় সাধনার এইটাই লক্ষ্য।
খ্রীস্ট নিজেই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন ভিতরে ভগবানকে খুঁজতে। সেন্ট লুক রচিত বাইবেলে আমরা পাই: ‘‘ক্রিয়াদি অনুষ্ঠানের দ্বারা স্বর্গরাজ্য পাওয়া যায় না। কেউ বলতে পারে না যে ‘এখানে দেখ’ বা ‘সেখানে দেখ’। লক্ষ্য কর—স্বর্গরাজ্য তোমার ভিতরে রয়েছে।’’ এই উক্তি সময় সময় এভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে খ্রীস্ট এ জগতে তাঁর শিষ্যদের মধ্যে বিরাজ করছেন।

স্বামী প্রভবানন্দের ‘বেদান্তের আলোকে খ্রিস্টের শৈলোপদেশ’ 

আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।

পুণঃপ্রচারে বিনীত 
     প্রণয় সেন
         প্রণয়
Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment