পার্ব্বতী শিবকে গুরু-মাহাত্ম্য বিষয়ে বলতে বারম্বার প্রার্থনা করলে মহাদেব সানন্দে বল্লেন——‘গু’ শব্দের অর্থ অন্ধকার (অজ্ঞান) ও ‘রু’ শব্দের অর্থ আলোক (জ্ঞান)। অজ্ঞান বিনাশকারী যে ব্রহ্ম তিনিই গুরু তাতে কোন সংশয় নাই।
—‘গু’ শব্দের অর্থ অন্ধকার এবং তাকে দূর করে ‘রু’ কার। অজ্ঞানরূপ অন্ধকার দূরীভূত করেন বলে তাঁকে গুরু বলা হয়।
—‘গু’ কার গুণাতীত বাচক ও ‘রু’ কার রূপাতীত বাচক। গুণ এবং রূপের অতীত হওয়ায় তাঁকে গুরু বলা হয়।
—(গুরু শব্দের) প্রথম অক্ষর ‘গু’ শব্দের দ্বারা মায়াদি গুণের প্রকাশক বুঝায় এবং ‘রু’ কার দ্বারা মায়া বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি দাতা পরমব্রহ্মকে বুঝায়।
—‘গু’ শব্দ গুণাতীত অর্থবোধক ‘রু’ শব্দ রূপাতীত অর্থ বোধক। যিনি গুণাতীত ও রূপাতীত স্থিতি প্রদান করেন তাঁকে গুরু বলা হয়। ‘‘গূঢ়াবিদ্যা জগন্মায়া দেহশ্চাজ্ঞানসম্ভবঃ।/ বিজ্ঞানং যৎ প্রসাদেন গুরুশব্দেন কথ্যতে।।’’
—জগৎ গূঢ় অবিদ্যাত্মক মায়াস্বরূপ এবং দেহ অজ্ঞানজাত। যাঁর কৃপায় এই বিশ্লেষণাত্মক জ্ঞান উপজাত হয় তাঁকেই গুরু শব্দের দ্বারা অভিহিত করা হয়। পুনরায় বলা হয়েছে যে—‘‘অভিনেত্রঃ শিবঃ সাক্ষাৎ দ্বিবাহুশ্চ হরিঃ স্মৃতঃ।/ যোহচতুর্বদনো ব্রহ্মা শ্রীগুরুঃ কথিতঃ প্রিয়ে।।
—(শিব পার্ব্বতীকে বলছেন) হে প্রিয়ে। গুরুদেবই ত্রিনেত্র রহিত (দ্বিনেত্রধারী) সাক্ষাৎ শিব, তিনিই দ্বিবাহুধারী (চতুর্ভূজরহিত) বিষ্ণু, তাঁকেই চতুর্বদনরহিত (এক বদনধারী) ব্রহ্মা বলা হয়। ‘‘গুরু র্বিষ্ণুঃ সত্ত্বময়ো রাজসশ্চতুরাননঃ।/ তামসো রুদ্ররূপেণ সৃজত্যবতি হস্তি চ।।’’
—গুরুদেবই সত্ত্বগুণী হয়ে বিষ্ণুরূপে জগতের পালন করেন, রজোগুণী হয়ে ব্রহ্মারূপে জগতের সৃজন করেন এবং তমোগুণী হয়ে মহেশ্বররূপে জগতের সংহার করেন। ‘‘ব্রহ্মানন্দং পরমসুখদং কেবলং জ্ঞানমূর্ত্তিং/দ্বন্দ্বাতীতং গগনসদৃশং তত্ত্বমস্যাদি লক্ষ্যম্।/ একং নিত্যং বিমলমচলং সর্ব্বধী সাক্ষিভূতং/ ভাবাতীতং ত্রিগুণরহিতং সদ্গুরুং তং নমামি।।’’
—যিনি ব্রহ্মানন্দ স্বরূপ, পরম সুখ প্রদানকারী, কেবল জ্ঞান-স্বরূপ, দ্বন্দ্ব রহিত (সুখ-দুখ, শীত-উষ্ণাদি রূপ দ্বন্দ্ব) আকাশ সদৃশ সূক্ষ্ম ও সর্ব্বব্যাপক, তত্ত্বমসি (তুমিই সেই) আদি মহাকাব্যের লক্ষ্য স্বরূপ, এক, নিত্য, নির্ম্মল (মল হীন), অচল, সকল বুদ্ধির সাক্ষিস্বরূপ, সকল ভাবনাতীত, সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ এই ত্রিগুণ রহিত, এই রূপ গুরুদেবকে নমস্কার করি।
উপরোক্ত এইরূপ বহু শাস্ত্রোক্তি পাওয়া যায় অর্থ হচ্ছে—যে গুরু ও ভগবান অভিন্ন। শ্রীযুক্ত দাদাগুরুজী মহারাজ বলেছেন—
‘‘গুরুতত্ত্ব এই যে গুরু পরমাত্মাই; পরমাত্মাই তোমার উদ্ধারের জন্য গুরুরূপী হইয়াছেন।’’
তিনি আরও বলেছেন যে—‘‘গুরুকে মনুষ্য বুদ্ধিতে দেখিবে না। বস্তুতঃ ভগবানই গুরুরূপে শিষ্যকে কৃপা করিয়া থাকেন; অতএব গুরুর মনুষ্যভাব এবং ভগদ্ভাব দুইই আছে। মনুষ্যভাবে গুরু কোন বিষয় অনবধানতা বশতঃ অনবগত থাকিলেও ভগদ্ভাবে জ্ঞাত থাকেন। মনুষ্য ভাবে যে সমস্ত জ্ঞাত থাকেন তাহা নহে। এই বিষয়ে তত্ত্ব বোধগম্য করা কঠিন।’
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে—‘‘আচার্য্যং মাং বিজানীয়াৎ নাবমন্যেত কর্হিচিৎ।/ ন মর্ত্ত্যবুদ্ধ্যসূয়েত সর্ব্ব দেবময়োঃ গুরুঃ।।’’
—আচার্য্যকে আমার (ভগবানের) স্বরূপ বলে জানবে। তাঁতে কখনও মনুষ্যবুদ্ধিরূপ অসূয়া (দোষারোপ) করবে না। তাঁকে কখনও অসম্মান করবে না। গুরু সর্ব্বদেবময়।
‘‘আর্চ্চ্যে বিষ্ণৌ শিলাধীর্গুরুষু নরমতির্বৈষ্ণবে
জাতিবুদ্ধির্বিষ্ণোর্বা বৈষ্ণাবানাং কলিমলমথনে পাদতীর্থেহম্বুবুদ্ধিঃ।
শ্রীবিষ্ণোর্নাম্নি মন্ত্রে সকলকলুষহে শব্দসামান্য—
বুদ্ধির্বিষ্ণৌ সর্ব্বেশ্বরেশে তদিতরসমধীর্যস্য বা নারকী সঃ।।’’
—যে অর্চ্চনীয় বিষ্ণুমূর্ত্তিকে শিলা, গুরুদেবকে সাধারণ মানুষ, বৈষ্ণবকে শূদ্র চন্ডাল আদি জাতি, বিষ্ণু বা বৈষ্ণবের কলিপাপনাশক পাদোদককে সামান্য জল, সর্ব্বপাপনাশক বিষ্ণুর নাম মন্ত্রকে সামান্য শব্দ, সর্ব্বেশ্বর বিষ্ণুকে অন্যান্য দেবতার সমান মনে করে সে নরকগামী হয়। শ্রীভগবান স্বয়ং শিষ্যরূপী জীবকে উদ্ধার করবার জন্য মনুষ্য দেহ ধারণ পূর্ব্বক (অবলম্বন করে) গুরুরূপে অবতীর্ণ হন। গুরুর পূজা তাঁরই পূজা, গুরুর সেবা তাঁরই সেবা। ‘‘যো গুরুং পূজয়েদ্ভক্ত্যা বিধিদৃষ্টেন কর্ম্মণা।/তেনাহং পূজিতো নিত্যং দেবি সত্যং ব্রবীমি তে।’’ শ্রীবিষ্ণু অবতার বরাহ ভগবান ধরিত্রী দেবীকে বলেছেন।
কাঠিয়া বাবা স্বামী কৃষ্ণদাসজী মহারাজ প্রণীত ‘নিম্বার্ক সাধন প্রণালী’
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নূতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নূতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নূতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
পুনঃপ্রচারে বিনীত-
প্রণয় সেন
0 comments :
Post a Comment