“আত্মজ্ঞানমিদং দেবি পরং মোক্ষৈকসাধনম।
সুকৃতৈর্মানবো ভূত্বা জ্ঞানীচেন্মোক্ষমাপ্নুয়াৎ।।
সুকৃতৈর্মানবো ভূত্বা জ্ঞানীচেন্মোক্ষমাপ্নুয়াৎ।।
প্রাচীনকালে মানুষের পরিপ্রশ্নের প্রতিভূ ছিলেন পার্বতী। মানব মনের যা কিছু চিরন্তন জিজ্ঞাসা তা মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে পার্বতী সদাশিবকে জিজ্ঞাসা করতেন। সদাশিবের উত্তরগুলো তো সর্বকালের নয়নাভিরাম রত্ন। কিন্তু পার্বতীর প্রশ্নগুলো এতই সুন্দর যে প্রশ্ন শুনে যে কোন বিদগ্ধ মানব ভাববেন, ‘সত্যিই তো, এটা আমারও মনের প্রশ্ন।’ তাই পার্বতীর প্রশ্নগুলোও সযত্নে সাজিয়ে রাখবার মত জিনিস। পার্বতীর এই মূল্যবান প্রশ্নগুলোর মিলিত নাম নিগম শাস্ত্র। এই নিগম-শাস্ত্র একটি উন্নত মানের পরিপ্রশ্নের সমাহার। শিবের উত্তরগুলো যদিও দার্শনিক দ্যুতিতে দীপ্তিমান তবু তার বৈবহারিক মূল্য দার্শনিক মূল্যকেও ছাপিয়ে উঠেছে। আরও ভাল করে বললে বলতে হয়, শিবের দার্শনিক ব্যাখ্যা বৈবহারিক মূল্যে প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। পার্বতীর প্রশ্ন নিগম আর শিবের উত্তর আগম এই দুইকে তন্ত্রে হংসের দু’টি পক্ষ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন এক পক্ষযুক্ত পাখী উড়তে পারে না তন্ত্রও তেমনি আগম-নিগম দুইকে নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একটিকে বাদ দিলে তন্ত্রের মূল সত্তা আহত তথা ব্যাহত হয়ে পড়ে।
এই শ্লোকটিতে পার্বতীর প্রশ্নের উওরে শিব বলছেন মোক্ষ সাধনার একমাত্র পথই হ’ল উপযুক্ত অনুশীলনের দ্বারা আত্মজ্ঞান লাভ করা। এখানে বলা হয়েছে, এই আত্মজ্ঞানের সাধনা ব্যতিরেকে মোক্ষ প্রাপ্তি অসম্ভব। কেউ কেউ হয় তো বলতে পারেন এই আত্মজ্ঞান লাভের জন্যে ভক্তির পথই তো সর্বোৎকৃষ্ট পথ। কিন্তু এখানে ‘ভক্তি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় নি। তার কারণ হ’ল এই: শৈব জগতের গোড়ার দিকে সাধনামার্গে ‘ভক্তি’ শব্দটি ব্যবহৃত হ’ত না, হয়ে আসছে পরবর্তীকাল থেকে। সাধনামার্গিক যে অমূল্য উপদেশটিতে বলা হয়েছে “মোক্ষকারণসমগ্র্যাং ভক্তিরেব গরীয়সী”— এই উপদেশটি অনুমানিক পনের শত বৎসর পূর্বেকার অর্থাৎ শিবের সময়ের অনেক পরেকার। শিব এখানে বলছেন, আত্মজ্ঞানই মোক্ষপ্রাপ্তির পথ। ইতোপূর্বে খুব ভাল ভাবেই বলা ও বোঝানো হয়েছে যে আত্মজ্ঞান লাভ করতে গেলে সাধনানিষ্ঠা অত্যাবশ্যক। এও বলা হয়েছে, সবকে ছেড়ে একের দিকে ছুটে গেলে প্রাণের সমস্ত মাধুরীকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত করে পরম শিবের অনন্ত মধুময়তায় পূর্ণাঞ্জলিতে সম্প্রদান করতে পারলে তবেই পরম শ্রেয়ের প্রাপ্তি ঘটে। আর তবেই হয় আত্মজ্ঞান। এর চেয়ে ভক্তি তত্ত্বের গভীরতর বা মধুরতর ব্যাখ্যা আর কী হতে পারে! তবে শিব বলছেন: এই জিনিসটি কে পারে? কে এই আত্মজ্ঞানলাভের অধিকারী। শিব জাতিভেদ, গোত্রভেদ, বর্ণভেদ মানতেন না। সুতরাং তিনি অধিকার-ভেদ কী ভাবে নির্ধারণ করেছিলেন। শিব বলছেন, জন্মজন্মান্তরের সুকৃতিতে জীব যখন মানবত্বে অধিরূঢ় হয়, মনুষ্যত্বের অভিজ্ঞান প্রাপ্ত হয় তখনই সে আত্মজ্ঞান অর্জনের অধিকারী বলে বিবেচিত হয়। প্রশ্ন করা যেতে পারে যে প্রতিসঞ্চর ধারায় স্বাভাবিক নিয়মে একদিন বিভিন্ন জীব মানবত্বের পরিভূতে তো আসবেই। তবে মানবত্ব প্রাপ্তির জন্যে প্রাজন্মিক সুকৃতির কথা কেন বলা হ’ল? আসল কথা হচ্ছে এই যে জীব প্রতিসঞ্চার ধারায় এগোয় স্তরে স্তরে একটি সুবিন্যস্ত পদ্ধতি ধরে। সব চেয়ে উন্নত যে জীব প্রতিসঞ্চার ধারায় ঠিক পরের ধাপটিতে এসে মানুষের জন্ম লাভ করছে সে নিশ্চয়ই মানুষ। কিন্তু তার পরিস্থিতি পশুত্ব ও মনুষ্যত্বের অভিন্ন রেখার কাছাকাছি। সুতরাং শরীর মানুষের হলেও চিন্তায় স্মরণে আচরণে অল্পস্বল্প মানুষের মত হলেও পশু-জীবনের সংস্কার তার সর্ব সত্তায় ভরপুর হয়ে থাকে, অধ্যাত্মচেতনার উন্মেষ তার মধ্যে খুবই কম হয়ে থাকে, পশুসুলভ বৃত্তির দিকেই সে ছোটে বেশী।
শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তির ‘নমঃ শিবায় শান্তায়’
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।
পুণঃপ্রচারে বিনীত -
প্রণয় সেন
প্রণয় সেন
0 comments :
Post a Comment