কাম


আজ যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বলবো,,তা কম-বেশি প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। বিষয়টি হলো "কাম" এবং একটি ছোট্ট ঘটনা শেয়ার করবো, কীভাবে মহাদেব "কাম" কে অতিক্রম করেছিলেন ??
এই "কাম" শব্দের অর্থ শুধুমাত্রই "বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ" নয়, এই শব্দের পরিধি বৃহৎ। ধরা যাক, কেউ কেনাকাটা করতে খুব ভালোবাসেন, বা ধরুন, কেউ মোবাইল ঘাটতে ভালোবাসেন, ইত্যাদি এইরকম আরও বিবিধ উদাহরণ কাম- এর মধ্যেই পড়ে ।আসলে এগুলো ভালোবাসার বিষয়বস্তুর মধ্যেই পড়ে না, এগুলো নেশা। নেশা দুটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা যায়--ভালো এবং খারাপ; যেমন বই পড়ার নেশা, কখনও খারাপ হতে পারে না । এখানে কোনো অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকারক বিষয়ই কাম।

তাহলে "কাম" শব্দের অর্থ কি?--এর উত্তরে বলা যায়,, কাম শব্দটির সামগ্রিক অর্থ হলো, এমন যেকোনো বিষয় যা মানুষকে অসম্পূর্ণ বোধ করায়, অর্থাৎ, 'এই বিষয়টি ছাড়া আমি সম্পূর্ণ নই, এটি ছাড়া বেঁচে থাকাই অসম্ভব'--এই সব চিন্তা ভাবনা কাম থেকেই এসে থাকে!!
কাম শুধুমাত্র শারীরিক আকর্ষণ নয়,মানসিক আকর্ষণও বটে । এছাড়া, ক্ষমতা নিয়ে লড়াই করা,কোনো কিছু অধিকার করার চেষ্টা এগুলোও কাম দ্বারা বশীভূত হয়েই মানুষ করে থাকেন।
পুরাণের কাহিনী অনুসারে আমরা জানি যে, মাতা সতীর দেহত্যাগের পর, মহাদেবের অন্তরে এবং সংসারের প্রতি চরম বৈরাগ্য দেখা দেওয়ায়, এই সৃষ্টির ভারসাম্য ক্রমশ বিগড়ে যাওয়ায়, দেবতারা ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন; এদিকে মাতা সতীর জন্মান্তর মাতা পার্বতী অপেক্ষা করছিলেন, মহাদেবকে বিবাহ করবার জন্যে । তারপর, দেবতাদের পরামর্শে কামদেব, বিভিন্ন প্রকার চেষ্টা করতে থাকেন,কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হতে থাকে। তখন কামদেব গাছের আড়াল থেকে তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী পুষ্পবাণ, মহাদেবের ওপর নিক্ষেপ করেন। তাঁর বহু সময়ের তপস্যা ভঙ্গ করে দেবার কারণে, মহাদেব তাঁর ত্রিনেত্র-এর দ্বারা কামদেব কে ভস্মীভূত করেন এবং তারপর কামদেবের বিভূতি বা ছাই তিনি সর্বাঙ্গে লেপন করেন ।
এ তো,,পৌরাণিক কাহিনী; আচ্ছা, "কাম"কে কখনও বাহিরে দেখা যায় কি? "কাম" কখনও কোনও ব্যক্তির বাইরে, সকলের সম্মুখে উপস্থিত থাকে কি? এর উত্তর "না",,,কারণ "কাম" মনের ভেতরের বিষয়,,যা প্রতিটি মানুষের ভেতরে লুকায়িত থাকে।
মহাদেবের কামদেব কে ভস্মীভূত করার ঘটনাটি যদি ন্যায়শাস্ত্রসম্মতভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে,মহাদেবের যোগনিদ্রা বা ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য কামদেব বিবিধ প্রয়াস করতে থাকেন এবং যার ফলে মহাদেবের ধ্যান ভঙ্গ হয়ে যায়। চোখ খুলতেই অতীব সুন্দরী মাতা পার্বতী কে দেখে তাঁর মনে, কিছু মুহূর্তের জন্য কাম জেগে ওঠে ।তারপর তিনি তাঁর ত্রিনেত্র দ্বারা সেই ভেতরে জেগে ওঠা কামনা কে ভস্মীভূত করেন।প্রকৃত পক্ষে ত্রিনেত্র,জ্ঞানচক্ষু কে প্রতিনিধিত্ব করে।অর্থাৎ, মহাদেব তাঁর প্রজ্ঞা দ্বারা তাঁর ঋণাত্মক শক্তিকে শনাক্ত করেন এবং তার দমন করেন। আর, ভস্ম লেপনের বিষয় টি যোগশাস্ত্রে পাওয়া যায়, খুব সম্ভবত, তিনি তাঁর যোগ দ্বারা সেই কামনাকে ভস্ম করার পর,তার ছাই হয়তো, মহাদেবের ঘর্মের মাধ্যমে বেড়িয়ে এসেছিল।
এই হলো, মহাদেবের কামদেব কে ভস্মীভূত করার ঘটনাটির প্রকৃত এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণ।।


আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।

Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment