Try to make a balance between the materialistic life as well as spiritual life


মানুষ, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছেন যে, কোনো বিষয়ের দিকেই তাকিয়ে দেখার সময় নেই। এখনকার সময়ে, মানুষের এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার কিছু সময় পর থেকেই শুরু হয়ে যায় তাঁর সংগ্রাম, রাস্তায় নেমে যাঁর দিকেই নজর দেবেন, দেখবেন সে-ই ছুটে চলেছেন। সর্বদাই কিসের একটা যেনো ব্যস্ততা ও অদ্ভুত এক অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়।  
সবাই প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, আর বেশিরভাগ মানুষেরই সব বিষয়েই জেতার মানসিকতা দেখা যায় এবং কখনও জীবনে কোথাও এতটুকুও হেরে গেলে বিপন্নতা রোগে ভুগতে থাকেন,চিত্তক্ষোভ হতে থাকে, নিজেকে ছোটো ভাবতে থাকেন মানুষ। আবার অপরদিকে, এমনও কিছু মানুষদের দেখা যায় যাঁরা নিজে যদি কখনও হারের মুখোমুখি হন, তাহলে তাঁরা এতোটাই আগ্রাসনমূলক হয়ে ওঠেন যে,তাঁরা অন্যের সাফল্যকে মেনে নিতে পারেন না।


এ সমাজে এমন বিকৃত মানসিকতার মানুষদের আধিক্য অনেক বেশি হবার কারণে,,ছোটো ছোটো শিশুগুলো এসবের শিকার হয় । তারা তাদের ইচ্ছেমতো ছেলেবেলা কাটাতে পারে না। ছোটো থেকেই তাদের পিঠে বিশাল বড়ো একটি পুঁথিগত শিক্ষার বোঝা চাপিয়ে বিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হয়, বিদ্বান করে তোলার উদ্দেশ্যে। আর ঐ কচি কচি ঘাড় গুলো নুইয়ে পড়ে, যেমন জল না পেলে চারাগাছ গুলো নেতিয়ে পড়ে,ঠিক তেমন। মনে করে দেখুন তো, আমাদের সময়ে যখনই বিকেল হতো, তখনই আমরা মাঠে চলে যেতাম খেলতে,আবার সন্ধে হলেই বাড়ি ফিরে আসতাম। কিন্তু, এই শিশুগুলো শান্তিতে দম ফেলার ফুরসত পর্যন্ত পায় না। তারা যতো বড়ো হতে থাকে, ততই তাদের প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়, আর তার সাথে বাবা-মা,আত্মীয়স্বজন,বিদ্যালয় তো আছেনই এ অদ্ভুত বিকারগ্রস্ত প্রতিযোগিতায় প্রেরণা দেবার জন্যে, কতটুকু শিখতে পেরেছে সেটা নিয়ে কোনও আলোচনাই নেই, শুধু বক্তব্য হলো, পরীক্ষায় কত শতাংশ নম্বর অর্জন করতে পারলো, আর নম্বর কম পেলে সে ছাত্রদের সমবয়সী অন্য কারোর সাথে তুলনা করা,,,আবশ্যক হয়ে গিয়েছে এখনকার সময়ে।
কিন্তু আমরা বারংবার ভুলে যাই যে,
Life is not a race,
Life is a meaningful journey!!
অর্থাৎ, জীবন কোনো দৌড়ের প্রতিযোগিতা নয় যেখানে, শুধুমাত্র জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, "সাফল্য অর্জন"; যার দিকে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলা এবং অন্য কোনো দিকেই দৃষ্টিপাত না করা নয়; জীবন হলো এক "অর্থবহ যাত্রা", যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখেই চলেছি এবং জীবনের শেষদিন অবধি শিখতেই থাকবো।
আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছি যে, আমরা তাঁকেই আজ ভুলতে বসেছি, যাঁর পরম কৃপা ছাড়া, এ পৃথিবীতে মানুষ রূপে জন্মগ্রহণই করতে পারতাম না, তিনি হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। বিশ্বাস করুন,একটু নিয়ম করে, দুবেলা দুটো জল-বাতাসা দিলেই তাঁর সেবা করা যায় না। মাথায় রাখা দরকার যে, "আস্তিক" ও "আধ্যাত্মিক" ব্যক্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে । কিছু মানুষকে দেখা যায়, যখন তাঁরা খুব প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, একমাত্র তখনই প্রয়োজনে ঈশ্বরের সেবা করে থাকেন; আর যখন ঈশ্বর কৃপা বর্ষণ করেন তাঁর ওপর, তখন পরমুহূর্তেই তাঁরা ঈশ্বরকে মনেও রাখেন না, আর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা তো দূরের কথা। সত্যি বলতে, যদি কারোর মধ্যে ঈশ্বরকে পাবার তীব্র আকাঙ্খা থেকে থাকে, তাহলে ঈশ্বরের পাদপদ্মে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত করতে হবে এবং ভাবতে হবে, ঈশ্বর মঙ্গলময়, তিনি কদাপি তাঁর ভক্তের ক্ষতি হতে দেবেন না ।
আর একটা অকাট্য সত্য বলি, যা আমাদের সর্বদাই মনে রাখতে হবে সেটা হলো, প্রতিটি মানুষ তাঁর কর্মজীবন অনুযায়ী(এখানে "কর্মজীবন" বলতে, চাকরি বা ব্যবসা নয়, এই "কর্মজীবন" বলতে সারা জীবনের ভালো কর্ম ও মন্দ কর্মের কথা বলছি) তার ফল পেয়ে থাকেন, তাঁর কাছে চাইলেই আপনি বেশি পাবেন বা না চাইলে পাবেন না---তা নয়, যতটুকু আপনি সেই বিষয়টির অধিকারী, ঠিক ততটুকুই পাবেন। তাই অযথা, ঈশ্বরের সামনে নিজের জন্যে বর প্রার্থনা করে সময়ের অপচয় করা উচিৎ নয়, বরং সে সময়ে অন্য মানুষের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা এবং যা পাচ্ছেন, তাঁর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা উচিৎ, কারণ ঈশ্বর অপার দয়াবান, তাই সর্বদাই মানুষ তাঁর যোগ্যতার চাইতে অনেক বেশিই পান। প্রতিটি মানুষের জন্মের একটি নির্দিষ্ট কারণ থাকে এবং ঈশ্বর তাঁকে বিশেষ এক উদ্দেশ্য নিয়েই পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। কিন্তু, মানুষ এ পৃথিবীর মোহ-মায়ার জালে নিজেকে জড়িয়ে একের পর এক পাপে নিজেকে লিপ্ত করতে থাকেন, আর মন্দ কর্মের ফল তো আর কখনও ভালো হতে পারে না, তাই তাঁর মন্দ কর্মফলের জন্যে নিজেরাই দুঃখী হয়ে যান এবং চরম নৈরাশ্যের শিকারগ্রস্ত হয়ে ঈশ্বরকেই অবমাননা করতে থাকেন, এই হলো পৃথিবীর বর্তমান পরিস্থিতি।
এখন সমগ্র প্রাণীকুল কলিযুগের অন্তর্গত। এখনকার পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ আমরা সমাজ বিজ্ঞানে খুঁজে পাই ঠিকই, কিন্তু, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে কলিযুগে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, মানুষের সঠিক ভাবে আত্মার জাগৃতি না হওয়া, মানুষের চেতনা না ঘটা, কারণ মানুষ এই ধরাধামের নশ্বর বিষয়ের ওপর এতোই মোহান্ধ যে, তাঁরা ঈশ্বরের দেখানো মার্গে তাঁরা চলতে সক্ষম হন না এবং এর ফলে তাঁদের মোক্ষ লাভ হয়ে ওঠে না, আর কর্ম ফল ভোগ করতে বারংবার এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হয় ।
তা এবার প্রশ্ন হলো, তাহলে মানুষ এই কলিযুগে মোক্ষ লাভের জন্য কি করবেন? তাঁরা কি শুধু দৈনন্দিন কাজকর্মে ফেঁসেই থাকবেন? নাকি সারাদিন শুধু ঈশ্বরের নাম জপ করবেন? এই কলিযুগে মানুষের কি করণীয়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমার 'রামকৃষ্ণদেবের কথামৃত'-এর একখানি গল্প মনে পড়ে গেলো । যদিও আপনারা সবাই জানেন, তাও শেয়ার করছি।
এক গ্রামে এক গরীব চাষা ছিলেন । তিনি অত্যন্ত সৎ এবং পরিশ্রমী একজন মানুষ, তার সাথে তিনি বড়োই নারায়ণ ভক্ত। তিনি প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে নারায়ণের নাম জপ করে মাঠে চাষ করতে যেতেন, আবার সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি ফিরে নারায়ণের নাম জপ করে, দুটো মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন । তা একবার দেবর্ষি নারদ মর্ত্যধামে ভ্রমণ করতে করতে এই চাষার এই চাষাকে দেখতে পান এবং তাঁর আচরণ গুলো দেখে তিনি বড়োই অবাক হন এবং বৈকুন্ঠে গিয়ে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর কাছে আদ্যোপান্ত সমস্ত ঘটনা বললেন । তা শুনে নারায়ণ হেসে দেবর্ষি নারদকে বললেন, হে মুনিবর! সে আমার পরম ভক্ত!! একথা শুনে দেবর্ষি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন এবং খানিক ঈর্ষার সাথে বললেন, কিন্তু প্রভু! আমি তো আপনার নাম সারা দিন জপ করি, আপনার নাম বিনা,অন্যকিছু মুখে উচ্চারণ অবধি করি না, তাহলে সে হিসেবে আমিই তো আপনার পরম ভক্ত প্রমাণিত হই, তাই না প্রভু??
একথা শুনে নারায়ণ তাঁর হাতে একবাটি তেল দিয়ে বললেন, আচ্ছা বেশ মুনিবর! আপনি আমার পরম ভক্ত, তাই তো? তাহলে একখানা কাজ করুন, এই বাটিটি নিয়ে গোটা মর্ত্যধামে ভ্রমণ করে আসুন তো দেখি!! তবে হ্যাঁ, দুটো শর্ত আছে, এক, আপনি আপনার বাহন ঢেঁকি নিয়ে যেতে পারবেন না; দুই, এই তেল এক ফোঁটাও মাটিতে না পড়ে, তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে । সব কথা শুনে নারদমুনি প্রভুর আদেশ মেনে বৈকুন্ঠ থেকে রওনা দিলেন এবং সারা মর্ত্যধামে তেলের বাটিটি নিয়ে খুব সাবধানে ভ্রমণ করে বৈকুন্ঠে ফিরে এসে তেলের বাটি প্রভুর হাতে তুলে দিলেন । তারপর, দেবর্ষি শ্রীবিষ্ণুকে বললেন, প্রভু!! এবারে বিশ্বাস করবেন তো, আমিই আপনার কথায় গোটা মর্ত্যধাম সেই ধ্বংসকারী তেল নিয়ে ও পায়ে হেঁটে ঘুরে এলাম; তাহলে আমিই তো আপনার সবচেয়ে বড় ভক্ত, তাই না? একথা শুনে নারায়ণ হেসে বললেন, দেবর্ষি একটি প্রশ্ন করি, আচ্ছা, আপনি যখন তেলের বাটিটি নিয়ে মর্ত্যধামে ভ্রমণ করছিলেন, তখন আমার নাম আপনি কতবার জপ করেছিলেন? তখন নারদের মনে পড়ল, তিনি বাটিটি নিয়ে এতোটাই সচেতন ছিলেন যে, নারায়ণের নামোচ্চারণ করতেই ভুলে গেছেন। একথা মনে পড়েই তাঁর গভীর শোক হতে লাগলো এবং নিজের ত্রুটি স্বীকার করলেন । তখন ভগবান শ্রীবিষ্ণু দেবর্ষি নারদকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, হে মুনিবর! আপনিও আমার পরম ভক্ত! কিন্তু মর্ত্যের ঐ চাষাকে লক্ষ্য করুন! সে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছে কর্মফল ভোগ করতেই, তাকে তো কর্ম করতেই হবে; সে যে এতো কাজের ফাঁকে আমায় মনে রেখেছে, আমায় দুবেলা ডাকে,আমি এতেই সন্তুষ্ট!!! তখন দেবর্ষি নারদ সমস্ত বিষয়টি বুঝতে পেরে নারায়ণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।
তা এই গল্প থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে, এ পৃথিবীতে মানুষের করণীয় হলো,
Try to make a balance between the materialistic life as well as spiritual life.....
সৎপথে নিজের দৈনন্দিন জীবন এবং আধ্যাত্মিক জীবনের মধ্যে সমতা বজায় রাখার চেষ্টা করা, দুটোকেই সম পরিমাণে গুরুত্ব দেওয়াই এ যুগের মানুষের কাজ।


আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে চাইলে অবশ্যই দেখুন আমাদের সকলের এই নুতন চ্যানেলটি, আর সর্বদা আনন্দে থাকুন ও আনন্দে রাখুন সকলকে : https://bit.ly/2OdoJRN
ভারতের সাধক ও সাধিকা গ্রুপের সকল সদস্যদের কাছে আমার বিনীত আবেদন,
ভারতের সকল সাধক ও সাধিকার ভাবধারা সম্প্রচার ও পুনঃপ্রচারের উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের এই নুতন ইউটিউব চ্যানেল,
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
এটি একটি মহৎ প্রয়াস, আপনিও এর অংশীদার হোন।

Share on Google Plus

About Indian Monk - Pronay Sen

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments :

Post a Comment